জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির বিকল্প ছিল!
দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও এর বিকল্প ছিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই বিকল্প পথে সরকার হাঁটতে পারত। কিন্তু সেটি না করে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে সরকার নজিরবিহীন দাম বাড়াল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন অনেক কম ছিল তখন কিন্তু সরকার লাভ করেছে। সেই লাভের টাকা দিয়েই লোকসান ঠেকাতে পারত।
যদিও লাভের টাকা কোথায় গেল সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন নির্মাণসহ আরও কিছু উন্নয়নমূলক কাজে সেই টাকা খরচ করা হয়েছে। যাতে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
জানতে চাইলে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অনেক ভালো বিকল্প থাকা সত্ত্বেও কীভাবে মাত্র কয়েক মাসের মাথায় এইরকম উচ্চ হারে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম বাড়ায়? সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে এসব তেলের দাম বেড়েছে তাই বাধ্য হয়ে বাড়াতে হচ্ছে। কথাটা বিভিন্ন দিক থেকে ভুল।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী না, বরং নিম্নমুখী। দ্রুত তেলের দাম কমে যাচ্ছে। দাম বাড়ালে যে ভয়াবহ পরিণতি হয় তার কথা চিন্তা করে বহু দেশেই তেল আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে দাম কম রাখতে চেষ্টা করছে। সরকার সেটা করেনি।
তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী তো কয়দিন আগেই আমাদের জানিয়েছিলেন, অকটেন-পেট্রল আমাদের কিনতে হয় না, দেশেই উৎপাদন হয়। তাহলে দাম বাড়ানোর দরকার পড়ল কেন?
বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন অনেক কম ছিল তখন সরকার কয় বছরে লাভ করেছিলো ৪৭ হাজার কোটি টাকা এমনটা জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, গত কিছুদিনে যে লোকসান হয়েছে তার তুলনায় এই লাভ কয়েকগুণ বেশি। সরকার জনস্বার্থ ও অর্থনীতির কথা চিন্তা করলে লাভের টাকার একাংশ দিয়েই এই লোকসান ঠেকাতে পারত।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম. শামসুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেল। এই দাম বৃদ্ধি লুণ্ঠনমূলক। দেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি।
হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক মন্তব্য করে এম শামসুল আলম বলেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল আমাদের। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত।
গত ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে দিন দিন তেলের দাম কমছে। বৃহস্পতিবারও (৪ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলারের নিচে নেমেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাত্র ২ মাস আগেও ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১২০ ডলারের ওপরে ছিল। কারণ হিসেবে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে উৎপাদন বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদাও কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা বাড়ায় তেলের দাম কমছে।
তারপরও কেন এই তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটি নিয়ে যেসব আলোচনা চলছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। সেই ঋণ পেতে আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে আইএমএফ যে শর্ত দিয়েছে সেটা মানার মধ্য দিয়ে সরকার বিষ গিলল।
আইএমএফ যেসব দেশে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়, সেসব দেশেই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয় এমন দাবি করে রাশেদ খান মেনন বলেন, বৈশ্বিক সংকটের বাস্তবতা স্বীকার করে যে কথাটি বলা প্রয়োজন, তা হলো এই সংকটের দায়ভার সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
এনএইচবি/এমএমএ/