টিসিবি পণ্য বিক্রি শুরু, আছে অভিযোগও
লম্বা বিরতির পর সারাদেশে দরিদ্র মানুষের মধ্যে কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। শোকের মাস উপলক্ষে সারাদেশে এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডদারীদের মধ্যে এই পণ্য বিক্রি করা হবে। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
প্রায় তিন মাস পর টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হলেও একই পরিবারের তিন-চার জন ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া প্রথম দিনেই চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম বলে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া টিসিবি পণ্য বিক্রির কার্যক্রম দেখতে রাজধানীর বাবার রোডে টিসিবি ডিলারের দোকানে গিয়ে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। বাণ্যিজমন্ত্রী পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করে চলে যাওয়ার পর বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ পণ্য কিনতে লাইন ধরেন ডিলারের দোকানে। কিন্তু অনেকেই ঠিকমত পাচ্ছেন অভিযোগ তুলে বলেন, কার্ড বিতরণে অনেক অনিয়ম হওয়ায় প্রকৃত দরিদ্র লোকজন টিসিবি পণ্য কিনতে পারছেন না। তারা অভিযোগ করেন, দলীয় ছত্রচ্ছয়ায় একই ফ্যামিলিতে তিনটা থেকে চারটা কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন, কার্ড পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। বাড়ির মালিক বা কাউন্সিল অফিসে আইডি কার্ড দেওয়ার ১৫ বা ২০ দিন পর কার্ড পাওয়া গেছে। কার্ড পেয়েছেন এমন অনেকেই বলছেন, টাকা ছাড়া কার্ড পেয়েছি, কোন ঝামেলা হয় নাই। আইডি কার্ড দিয়েছি, তারপর কাউন্সিল অফিস থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে, কম দামে পণ্য দেওয়ার কার্ড রেডি হয়েছে, নিয়ে যাও।
কার্ড পাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডের ফ্যামিলি কার্ডধারী শাহনাজ খান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, আবেদনের ১০ দিন পর কার্ড পাওয়া গেছে। সে কারণেই আজ মাল নিতে এসেছি, ভালই লাগলো। তবে পণ্যের পরিমাণ খুবই কম। আরো বেশি পেলে ভালো হতো। এটা নিতে সকালে এসেছি, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
মুসলিম নামে অপর একজন জানান আবেদনের ১৫ দিন পর কার্ড পাওয়া গেছে এটা। ভালো লাগছে, কম দামে পাওয়ায়। কিন্তু মালের পরিমান একেবারে কম। এটা নিতে এসে বলা যায় সারাদিন চলে যাচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদাই জেনারেল স্টোরেও দেখা যায়, সেখানেও দীর্ঘ লাইন। জানতে চাইলে নাজমা বেগম ও ফাতেমা ইয়াসমিন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, আইডি কার্ড জমা দেওয়ার ১০-১৫ দিন পরে এ কার্ড পাওয়া গেছে, ঝামেলা হয়নি। কার্ড দিয়েই আজ পণ্য পাওয়া গেছে। তবে পণ্যের পরিমান খুবই কম।
শুধু ক্রেতা নয়, ডিলারদেরও একই বক্তব্য চাহিদা তুলনায় বিতরণকৃত মাল খুবই কম। এটা বেশি হলে আমাদেরও ভালো লাগতো। তারা আরো জানান, সরকার যেভাবে আমাদের দিয়েছে আমরাও সেভাবে সোমবার গোডাউন থেকে মাল তুলে আজ বিতরণ করছি। জানতে চাইলে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের টিসিবির ডিলার সদাই জেনারেল স্টোরের মালিক শহিদুল ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এক হাজার কার্ডের মাল পাওয়া গেছে। ব্যাপক চাহিদা, আজকে হয়ত শেষ হয়ে যাবে। ১ কেজি চিনি, দুই কেজি করে ডাল, পেঁয়াজ ও এক লিটার সয়াবিন তেল ৪৪৫ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিলার বলেন, আমরাও শুনেছি একই ফ্যামিলিতে দুই তিনজন করে ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছে। এটা যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই টিসিবি থেকে সংশোধন করা হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে দুলালী নামে একজন বলেন, কয়েকজনকে দেখলাম, একই ফ্যামিলির স্বামী-স্ত্রীসহ কয়েকজন মাল নিয়ে গেল। আমি খুবই গরীব। কেউ নাই, তারপরও আমি মাত্র একটাই পেলাম।
চাহিদার তুলনায় পণ্য কম দেওয়ার ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সবকিছুই সাশ্রয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই সরকার সাধ্যমত সারা দেশে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবি পণ্য দিচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩৩টি ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩১টি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ওয়ার্ডে দেওয়া হবে।
জেডএ/এনএইচবি/