১০ বছরে খানা বেড়েছে ২৭ শতাংশ
দেশে ১০ বছরের ব্যবধানে খানা বেড়েছে ৮৮ লাখের বেশি বা ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কারণ ২০১১ সালে খানার সংখ্যা ছিলো তিন কোটি ২১ লাখ। আর ষষ্ঠ জনশুমারিতে বেড়ে খানার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার। এমধ্যে সবচেয়ে বেশি খানার সংখ্যা হচ্ছে ঢাকা শহরে এক কোটি ১৬ লাখ ২৯ হাজার। ষষ্ঠ শুমারির খসড়া প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস। বর্তমানে লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার। ২০১১ সালের শুমারিতে ছিলো ১৪ কোটি ৪০ লাখ। বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ মানুষ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে প্রথম ডিজিটাল ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বুধবার (২৭ জুলাই) এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ. মান্নানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো'র মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান। অনুষ্ঠানে জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের টেকনিক্যাল সার্পোট টিম লিডার উপ-সচিব দিপংকরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে স্পিকার বলেন, ‘ভুলভ্রান্তি যাতে না হয় সে জন্য বিবিএস সঠিক তথ্য তুলে ধরে। এই শুমারিতে মহিলার সংখ্যা ৫০ দশমিক ৫০ শতাংশ ও পুরুষের সংখ্যা ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। তারমানে মহিলার সংখ্যা দেশে বেশি। কাজেই বুঝা যাচ্ছে মুল ধারার কাজে মহিলাদের সম্পৃক্ততা কতো বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ১ এই তথ্য অত্যন্ত গোপন রাখব। শুধু সরকার জানবে। অন্য কেউ জানতে পারবে না। কথা দিচ্ছি সরকিছু সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য। তারপরও বলব মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাই কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বিবিএস গর্ব করার মতো প্রতিষ্ঠান। এই জন্য ডিজিটাল শুমারি করা সম্ভব হয়েছে। খালে বিলে, রেলে প্রচুর বস্তি থাকে। ঢাকাকে মনে হয় শুধু বস্তি। তবে আগের চেয়ে তা কমেছে। এটা ভালো দিক। বাংলাদেশ কতোটুকু অগ্রসর হয়েছে এই শুমারিতে তা ফুটে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে বর্তমানে দেশে মোট বাসগৃহের (ঘর) সংখ্যা হচ্ছে তিন কোটি ৬০ লাখ। এরমধ্যে পল্লী এলাকায় দুই কোটি ৭৮ লাখ। আর শহর এলাকায় ৮২ লাখ। সবচেয়ে বেশি গৃহের সংখ্যা হচ্ছে ঢাকা বিভাগে ৮১ লাখ ১৯ হাজার ২০৫টি। আর সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে এক লাখ ৮৮ হাজার গৃহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দেশে জনসংখ্যা বাড়লেও শতকরা হারে জনসংখ্যার বৃদ্ধি আগের শুমারির তুলনায় ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১, ২০১১ ও ২০২২ সালে জনসংখ্যার গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২ দশমিক শূন্য ১ , এক দশমিক ৫৮, এক দশমিক ৪৬ ও এক দশমিক ২২ শতাংশ। জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ এক দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বরিশাল বিভাগে সর্বনিম্ন শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ।
দেশের জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ অবিবাহিত এবং ৬৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বর্তমানে বিবাহিত। বর্তমানে বিবাহিত সংখ্যার হার রাজশাহী বিভাগে সর্বোচ্চ ৬৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং সিলেট বিভাগে সর্বনিম্ন ৫৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
দেশে বস্তিখানা ১৮ লাখ
বর্তমানে সারাদেশে বস্তি খানা হচ্ছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। আর ভাসমান খানায় বসবাসরত জনসংখ্যা ২২ হাজার ১৮৫ জন। বস্তি খানা ও ভাসমান খানা ছাড়া অন্যান্য খানায় বসবাসরত জনসংখ্যা হচ্ছে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ। বস্তিতে বসবাসরত জনসংখ্যা এবং ভাসমান লোকের সংখ্যা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৮ লাখ ৮৪ হাজার জন ও ৯ হাজার ৪৭০ জন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শুমারিতে ১৭ হাজার ৫০৭টি খানার ৮৫ হাজার ৯৫৭ জনের আংশিক তথ্য পাওয়া গেছে। তাই মোট জনসংখ্যা ও লিঙ্গভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
জেডএ/