কম সরবরাহের অজুহাতে বাড়তি মাছ-মাংসের দাম
ঈদের পর সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা। মুরগি ও মাছের দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছ ও মাংসের দাম স্বাভাবিক হতে আরও তিন থেকে পাঁচ দিন লাগবে। সরকার ট্যাক্স, ভ্যাট কমালেও কমেনি চালের দাম। খাতুনগঞ্জে তেলের দাম কমলেও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছে না। তবে ঈদে শসার কেজি সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে গেলেও এখন দাম কমে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ঢেঁড়স, পটল, বেগুনসহ প্রায় সবজি ৫০ টাকা নিচে বিক্রি হচ্ছে।
শনিবার (১৬ জুলাই) কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেট, টাউনহল বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে। এভাবে কিছু জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, চাহিদা কম, তারপরও কেন বাড়বে দাম।
খাসির মাংস ১০০০ টাকা কেজি
ঈদুল ফিতরের পরে গরুর মাংস কেজি হঠাৎ ৭০০ টাকা হলেও পরে কমে ৬৫০ টাকা বিক্রি করেন বিক্রেতারা। ঈদুল-আজহার পর সেই দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়েনি দাম। তবে খাসির মাংস আগে ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও সরবরাহ কম অজুহাতে দাম বেড়ে এক হাজার টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে কারওয়ান বাজারের জনপ্রিয় মাংস বিতানের নুরুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে মাল (খাসি) নেই। তাই বেশি দামে কেনা, বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। স্বাভাবিক হতে আরও তিন থেকে পাঁচ দিন লাগবে। প্রতিবছরই ঈদের পর সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে যায়।’
এদিকে ঈদের পর খাসির মতো মুরগির দামও কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। নুরজাহান মুরগি বিতানের মো. নুরুল নবী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ঈদের পর সরবরাহ কমে গেছে। তাই পাকিস্তানি মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ২৫০ টাকা বিক্রি করতাম। একইভাবে ১৪০ টাকার পোলট্রি ১৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। ডিমের দামও স্থিতিশীল আছে। আগের মতো ১২০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে।’
এ সময় আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সব কিছু স্বাভাবিক, তারপরও খাসির মাংসের দাম শুনে অবাক লাগে। জেনে-শুনে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে।’
মাছের দাম বাড়তি
অপরদিকে কম সরবরাহের অজুহাতে মাছও বাড়তি বলে বিক্রেতারা জানান। মাছ ব্যবসায়ী ফারুক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘প্রায় মাছের কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। রুই ও কাতল মাছ ২৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, নদীর চিংড়ি ১৪০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০ টাকা, আইড় ১০০০ টাকা, পুটি ৮০০ কেজি, বোয়াল ৫০০, পাবদা ৬৫০, বাঘাইড় ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ।’
ঈদের কারণে ইলিশ মাছের দামও অনেক বেড়ে গেছে। খোরশেদ আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, কেজিতে ২০০ টাকা বেড়েছে। ২ কেজি ওজনের ইলিশ ২৫০০ টাকা কেজি, দেড় কেজি ওজনের ২০০০ টাকা ও ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া অন্যান্য মাছের দামও বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। আর ক্রেতা দিপু বলেন, ‘ঈদের পর চাহিদা কম বলা যায়। তারপরও বেশি মাছের দাম। এটা ভাবতে অবাক লাগে।’
শুল্ক কমানার প্রভাব পড়েনি চালে
সরকার শুল্ক কমালেও বাজারে তার প্রভাব দেখা যায়নি। জানতে চাইলে আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মো. আ. আওয়াল তালুকদার জানান, ‘ট্যাক্স কমানোর প্রভাব এখনো বাজারে দেখা যায়নি। ঈদের আগের মতোই মিনিকেট ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি, ২৮ চাল ৫০ থেকে ৫৪, চিনিগুড়া ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। তবে প্রায় দোকানে মোটা চাল পাওয়া যায় না। তবে কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এখনো কমছে না কেন চালের দাম? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমরা কি জানি। বেশি দামে কেনা তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এখনো আমদানি করা চাল বাজারে আসেনি। তাই কমছে না চালের দাম।
তবে ঈদের পরে আটার দাম কমেছে। আগে ২ কেজির আটা ১১৫ টাকাও বিক্রি করা হলেও বর্তমানে দাম কমে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য কিছু জিনিসের দামও কমের দিকে। কুমিল্লা জেনারেল স্টোরের গোরফান বলেন, ‘আটা ২ কেজি ১০০ টাকা, ৫ লিটোর তেল ৯৬০ টাকা, ২ লিটার ৩৯৫ টাকা ও এক লিটার ১৯৫ টাকা কেজি। গায়ের মূল্যের চেয়ে তেল কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। ডালের দামও কমে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এক কেজি প্যাকেট চিনি আগের মতো ৮৫ টাকা, খোলাটা ৮০ টাকা ও দেশি চিনি ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।'
শসার কেজি ৩০ টাকা
কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসলে হঠাৎ করে শসার কেজি সেঞ্চুরি ঝাড়িয়ে ১৫০ কেজি হয়ে যায়। সেই শসার কেজি ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বলে জসিম উদ্দিন জানান। একইভাবে মরিচের দাম কমে ১২০ টাকা কেজি ও লেবুর হালি ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আগের চেয়ে কম দামে বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পটল, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গার কেজি ৩০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, কুমড়া ও লাউ ২০ থেকে ৫০ টাকা পিস, লাল ও পাট সাক ১০ টাকা করে আটি বিক্রি করছে খুচরা বিক্রেতারা। ঈদের আগের মতোই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি, রসুন ৭০ থেকে ১১০ ও আদা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।
জেডএ/এমএমএ/