নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিল গ্রামীণফোন
সেবার মান সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে বিটিআরসি গত সপ্তাহে গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই নতুন বিতর্কের জন্ম দিল এই অপারেটর। মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে এখন থেকে সর্বনিম্ন ২০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। এর আগে সর্বনিম্ন ১০ টাকা রিচার্জ করা যেত। গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রাহকদের এসএমএস এর মাধ্যমে এ কথা জানিয়ে দিচ্ছে।
গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মুহাম্মদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন প্রডাক্টের সুবিধা সরলীকরণ করার অংশ হিসেবে ফ্লেক্সিলোডের সর্বনিম্ন রিচার্জ ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ২০ টাকার কমে সুলভ মূল্যে ১৪ ও ১৬ টাকার মিনিট প্যাকগুলো এবং সব রিচার্জ কার্ডগুলো আগের মতোই চালু থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ২১ এবং ২৯ টাকা রিচার্জে দুই দিন এবং তিন দিন মেয়াদে যেকোনো লোকাল নম্বরে গ্রাহকেরা বিশেষ কলরেট সুবিধা পাবেন।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনসাধারণ। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনরা এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। এমনকি কিছু কিছু অনলাইন গ্রুপে গ্রামীণফোনকে বয়কটের দাবিও জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে আলাপকালে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রামীনফোনের এই সিদ্ধান্তকে অনৈতিক বলেছেন। তিনি বলেন একজন গ্রাহকের উপর এধরনের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া রীতিমত শোষণ। আমি আমার সিমে কত টাকা রিচার্জ করবো সেটা আমার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কোম্পানি সেটা নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ি, দেশে এখন ১৮ কোটি ৪২ লাখ সক্রিয় সিম রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের সিম সংখ্যা ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার। গ্রাহক সংখ্যা, রাজস্ব ও মুনাফার দিক দিয়ে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের শীর্ষ অপারেটর।
এই নিষেধাজ্ঞার পর গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টেলিকম ব্র্যান্ড গ্রামীণফোন বিটিআরসি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইটিইউ’র সেবার মানদণ্ড অনুসরণ করার পাশাপাশি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মানদণ্ড থেকেও এগিয়ে। ধারাবাহিকভাবে নেটওয়ার্ক ও সেবার মানোন্নয়নে তারা বিটিআরসির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া নিলামেও গ্রামীণফোন সর্বোচ্চ অনুমোদিত তরঙ্গ অধিগ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় অপ্রত্যাশিত এ চিঠি ও নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি। আমরা মনে করি, আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহকদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনাই হবে এ সমস্যা সমাধানের সর্বোত্তম উপায়।
অপরদিকে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) বলছে, বিটিআরসির সিদ্ধান্তের বিষয়টি গ্রামীণফোনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেছেন, সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন সিম বিক্রি করতে পারবে না গ্রামীণফোন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ ছিল। আবার বিটিআরসির পরীক্ষাতেও সেবার মান সন্তোষজনক বলে মনে হয়নি।
এনএইচবি/এএস