‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রী মিলে ঋণ ও আমানতের সুদের হার নির্ধারণ করেছে ’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মানি (টাকা) লাগবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির দিকেও তাকাতে হয়। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যালান্স ঠিক রাখতে ঋণের সুদ ৯ শতাংশ করা হয়েছে। আর ২০২০ সালে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে আমানতে সুদ হার ছয় শতাংশ ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক তা আমলে নিয়ে কার্যকর করছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম সম্মেলন কক্ষে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় স্বাধীনভাবে কাজ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক কি করে অনেক সময় অর্থমন্ত্রণালয় ও সরকারও জানে না। যেমন আজ সরকার সংসদ অধিবেশনে বাজেট পাশ করলেও আমরা মুদ্রানীতি ঘোষণা করছি। ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল (শর্তপূরণ) হওয়ায় আমার সময়ে সীমান্ত ব্যাংক, বেঙ্গল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক সবই করে। এক সময়ে ঋণের সুদ ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ছিলো। ব্যবসায়ীরা দাবি করলে তা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমিয়ে সিঙ্গেল ডিজিটে আনার সিন্ধান্ত নেয় এবং ২০২০ সালে তা কার্যকর করার ঘোষণা দেয়। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর সবাইকে নিয়ে সভা করে আমানতে ঋণ হার ৬ শতাংশের বেশি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালে করোনাকালে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ কার্যকর করার আদেশ জারি করে। তাই বলা যায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক মিলে ঋণ-আমানতে সুদহার নয়-ছয় করা হয়েছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা মুদ্রার বিনিময় হার উন্মুক্ত রেখেছি। এ জন্য ২৭ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার সাপোর্ট (বিক্রি) দিয়েছি। যেখানে আগের অর্থবছরে এক সময়ে ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বাজার থেকে কিনেছি। বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্যই এসব কাজ করা হচ্ছে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো গ্রপকে সুবিধা দেওয়া হয় না। ব্যাংক, ব্যবসার স্বার্থে এবং প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। ঋণ সহায়তা দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের। যেমন বিলাসী পণ্যের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে এবং দেশিয় শিল্পের বিকাশে এলসি ঋণ মার্জিন ৭৫ এমনকি ১০০ শতাংশও করা হলো। ৭৫ শতাংশ ঋণ পরিশোধ করলে কেউ খেলাপী হবে না। কাউকে খুশি করার জন্য এসব করা হয় না। আমার মেয়াদ আজ শেষ। তাই যে যখনই পদে থাকবেন ব্যাংক তখন দেখবেন।’
ব্যাংকের কার্যক্রম পরিদর্শন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের রুটিন ওয়ার্ক (নিয়মিত কাজ), চলামান প্রক্রিয়া। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে ঘর থেকে বের হওয়া যায়নি। তারপরও পরিদর্শন কার্যক্রম চলামান রয়েছে। ইউনিয়ন ব্যাংকে সমস্যা একটা হয়েছে। এটি আমাদের নিয়মিত তদারকির মধ্যে আছে। সব ব্যাংক তো এক রকম নয়। কোনো ব্যাংক ভালো, খারাপ, মন্দ। সব ধরনের ব্যাংক আছে। আবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক একরকম, ব্যক্তি খাতের ব্যাংক অন্য রকম, বিদেশি ব্যাংক আরেক রকম, শরিয়াহ ব্যাংক আরেক রকম। সবই তো আর সমান নয়। এসব আমাদের ক্যামেলস রেটিংসে আসবে। যেখানে যে সমস্যা হবে, আমরা দেখব, আমরাই সমাধান বের করব।’
অর্থনীতিবিদ না হয়েও প্রায় আমলারা গভর্নর হচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমলারা ফুললি ইকোনোমিষ্ট (পরিপূর্ণ অর্থনীতিবিদ) না হলেও ব্যাংকিং বুঝতে কোনো সমস্যা হয় না। কারণ মাঠ পর্যায়ে দীর্ঘ দিনের কাজ করা অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিজ্ঞ অফিসারদের সমন্বয়ে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। এ জন্য দুই একজন ছাড়া প্রায় গভর্নর আমলা।
জেডএ/