বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সম্ভাবনার সাপেক্ষে আসন্ন (২০২২-২৩) অর্থবছরের বাজেট কিছুটা সংকোচনমুখী হবে— এমনটিই কাম্য। তবে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো কাটছাট করা একেবারেই সমীচীন হবে না। বরং এ খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ করাই এখন সময়ের দাবি।
বৃহস্পতিবার (১২ মে) ‘স্বাস্থ্য বাজেট বিষয়ক অনলাইন জাতীয় সংলাপ’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এ মতামত দেন।
এতে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। আলোচনা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের থিমেটিক গ্রুপের সভাপতি ড. রুমানা হক।
মূল নিবন্ধে ড. আতিউর বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গতানুগতিকভাবে মোট বাজেটের ৫-৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সচরাচর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মোট স্বাস্থ্য বরাদ্দের ২৫ শতাংশের মতো বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই অনুপাত আসন্ন অর্থবছরে ৩০ শতাংশ এবং মধ্যমেয়াদে ৩৫-৪০ শতাংশ করার পক্ষে মত দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের জন্য যে বরাদ্দ আছে তা তিনগুণ করা গেলে মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ে নাগরিকদের নিজস্ব খরচ ৬৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮ শতাংশের নিচে নেওয়া সম্ভব।
ড. মুশতাক রাজা চৌধুরী বলেন, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা বিশেষত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সর্বজনের জন্য সহজলভ্য করতে একটি জাতীয় কমিশন গঠন করার কথা ভাবা যায়।
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের আয়ের ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বাবদ ব্যয় করতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে ড. জুলফিকার আলি এই জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচি চালু করার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও অল্প সময়ের মধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের জন্য করোনা টিকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সব স্তরের মানুষের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের সদিচ্ছা প্রতিফলিত হয়েছে। এই দক্ষতা পুরো স্বাস্থ্যখাতের অন্যান্য কার্যক্রমে বজায় রাখা সম্ভব হলে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
ডা. হাবিবে মিল্লাত, এমপি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়াতে এ খাতের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য মো. আব্দুল আজিজ, এমপি বলেন, ‘দেশে ৪৯৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাহিদা মতো স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ধাপে ধাপে এগুলোর আধুনিকায়ন করা দরকার।
ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, ‘দেশের বাজারে যে ওষুধ পাওয়া যায় তার গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঔষধ প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জাতীয় বাজেটে সার্বজনীন স্বাস্থ্যবিমার জন্য বরাদ্দ দেওয়া দরকার।
এ ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন— ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), ডা. আ ফ ম রুহুল হক (সাতক্ষিরা-৩), মো. আব্দুল আজিজ (সিরাজগঞ্জ-৩), বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
জেডএ/আরএ/