ব্যবসায়ীরা কথা রাখেনি, বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ঈদের পর থেকেই বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসছিল বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি, ঈদের আগে থেকেই বাজার থেকে তেল হাওয়া হয়ে গেছে। ঈদের পর ৫ মে আমাদের সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী, মিলমালিকদের সঙ্গে বসে তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হলো। তারপর থেকে সমস্ত মিডিয়ায় খবর বের হয় যে তেলের দাম ৩৮ টাকা, ৪০ টাকা বেড়েছে।
সোমবার (৯ মে) বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সে ব্যাপারে কথা বলার জন্য, যা ঘটনা, আমরা কেন দাম নির্ধারণ করলাম, কেন বাড়ল, বাস্তবতাটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা, কি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এ দাম নির্ধারণ করলাম, আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা জানাতেই আপনাদের সঙ্গে বসা।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বড় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ডিলার পর্যায়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। আমরা ফাইন্ড আউট করার চেষ্টা করেছি যে ঈদের ১০ দিন বা সাত দিন আগে থেকে যে অ্যাবনরমাল ক্রাইসিসটা হলো সেটার পেছনে কারণ কী, কোথায় বাধা? সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
টিপু মুনশি বলেন, আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ঠিক করা হয়েছে যে অন্তত যেটা হয়েছে সেটা দেখা, সামনের দিনগুলোতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি না হয়, সেটা সর্ট আউট করা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, তারাও তাদের কথা বলেছে। ‘আমরা ফাইন্ড আউট করতে পেরেছি কোথায় কোথায় ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, কোথায় বেশি লাভের জন্য করা হয়েছে, তবে এটাও ঠিক যে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে একটা কথা শুরুতেই বলতে চাই, গত কয়েকদিন ধরে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দাম বাড়ানোর কথা বার বার বলা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে যেটা বলতে পারি, আন্তর্জাতিক বাজারে যে দামটা বেড়েছে, আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান অথবা এই উপমহাদেশের যেসব দেশ আছে সেসব দেশে তেলের কী দাম আছে সেসব নিয়ে তুলনামূলক একটা স্ট্যাটমেন্ট কেউ বলেনি। কেউ দেখাচ্ছেন না বা বলছেন না যে, গ্লোবাল মার্কেটে গত দেড় মাসে বা এক মাসে কী পরিমাণ দাম বেড়েছে। ইভেন আজকে বাজারে যে তেলটা বিক্রি করছে সেই তেলটা হয়ত আজ থেকে দুই মাস আগে ওই বন্দর ছেড়েছে, আমাদের চিটাগাং পোর্টে এসে পৌঁছেছে, কী দামে তারা কিনেছে, কী দামে তারা ছাড়িয়েছে বা রিলিজ করেছে, এই কথাগুলো যদি জানানো যেত...।
তিনি বলেন, দাম বেড়েছে এটা সত্য, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য কিন্তু আরেকটা সত্যও তো রয়েছে যে ‘রিজন বিহাইন্ড’। সেই সত্যটা যদি উপস্থাপন করা হয় তাহলে মানুষ বুঝতে পারে কোথায় ঝামেলা আছে, কোথা থেকে আসছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশে তেল উৎপাদন করি না। মাত্র ১০ শতাংশ তেল সার্বিকভাবে হয়। তাও বাদাম, সরিষার তেল মিলিয়ে। এই ৯০ শতাংশ আমাদের আমদানি নির্ভর। এসব কথাগুলোই আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ৬ ফেব্রুয়ারি দাম নির্ধারণ করলাম। আবার মার্চ মাসে…মাঝখানে দেখলাম দাম চড়া। সরকারের কাছে রিকুয়েস্ট করলাম, তারা ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করল। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসলাম। বললাম, নতুন করে দাম নির্ধারণ করার কিছু নাই। দেখলাম গ্লোবাল মার্কেট চড়া। ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের যে প্রভাব সেটা কমাতে হবে। ২০ মার্চ আমরা সেটা করলাম। সেই সময় ১৬৮ টাকা থেকে দাম আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা করে ওইটা ইমপোস করলাম। পাশাপাশি একটা অনুরোধ করলাম যে, সামনে রজমান মাস আসছে। এই রমজান মাসটা আপনারা তেলের দামটা আর বাড়াবেন না। তাদেরকে অনেক অনুরোধ করার পর বলল, ঠিক আছে। এটাই ছিল তাদের কাছে অনুরোধ। নরমালি একটা সময় হয়ে গিয়েছিল আরেকবার তাদের সঙ্গে বসার বা ১০ দিন পর বসার।’
অনুরোধ করেছিলাম যে, মানুষের কথা বিবেচনা করে আপনারা দয়া করে এই সময়টা আর কেউ দাম বাড়াবেন না। মিলমালিক, ইমপোর্টাররা যদি না বাড়ায় কাহলে রিটেইলার পর্যন্ত আগের দামেই যাবে। এ কথাও বলেছিলাম, রমজানের পর দ্রুত আপনাদের সঙ্গে বসে নতুন অবস্তা যেটা সেটি ঠিক করব। এটা তো কোনো কারচুপি করা হয়নি।
তিনি বলেন, এই যে রিটেইলার বা ডিলার কোথাও না কোথাও…তারা তো জানত এবং না জানার কোনো কারণ নাই, তারা তো জানত দামটা যাতে রমজান মাসে না বাব্যবসায়ীরা যে কথা দিয়ে গিয়েছিল...টোটাল ব্যবসায়ী চেইন এই ফজলুর রহমান থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারের যে রিটেইল, ডিলার বলেছিল যে আমরা দাম বাড়াব না। সেখানে তারা কথা রাখেনি। তারা ঈদের পর দাম বাড়বে বলে ঈদের ১০ দিন আগ থেকে তেল মজুদ করে রাখে। যার ফলে একজন রিটেইলার পর্যন্ত তার ঘর থেকে এক হাজার লিটার তেল বের হয়।
আমি এখন তাদের বলেছি, রিটেইল থেকে খুচরা ও ডিলার পর্যন্ত মনিটরিং করতে। তাদের যে অ্যাসোসিয়েশন আছে তারা সেটা দেখবে, যোগ করেন তিনি।
এনএইচবি/এমএমএ/