ভোজ্যতেলের দাম এক লাফে বাড়ল লিটারে ৪৪ টাকা
ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) নতুন দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নতুন এ দাম আগামীকাল শুক্রবার (৬ মে) থেকেই কার্যকর হবে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি এক লাফে ৩৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ৪৪ টাকা ও পাম তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৪২ টাকা।
নতুন নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে বিক্রি হবে ১৮০ টাকা। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা এবং পাম সুপারের দাম ১৭২ টাকা।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) এই নতুন দাম নির্ধারণ করার কথা জানায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স ও বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এর আগে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষের সঙ্গে এক বৈঠকের পর নতুন এই দাম নির্ধারণ করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মালিকদের এ সংগঠন।
সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এখন থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৯৮ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা, যেটি বর্তমানে ৭৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা এবং খোলা পাম তেল প্রতি লিটার ১৭২ টাকায় বিক্রি হবে। বর্তমানে বাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, সয়াবিন তেলের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে বাণিজ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। বৈঠকে তেল পরিশোধনকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর বিকেলে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও অপরিশোধিত পাম তেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বৃহস্পবিার (৫ মে) সন্ধ্যায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ঠিক বৈঠক না, ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের জন্য আমদানিকারকদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা আমার কাছে এসছিলেন। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তারা দাম বাড়ানোর বিষয়টি অবগত করেছেন।’
তিনি বলেন, ’নতুন দামের বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনকেও জানানো হয়েছে। তারা এটি পর্যালোচনা করবে। ট্যারিফ কমিশন যদি মনে করে দাম বেশি হয়েছে তাহলে আগামীতে সেটি পর্যালোচনা করে দাম কমানো হবে।’
বাণিজ্যসচিব বলেন, গত মার্চ মাসেই ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিলন। আমরা বাড়াতে দেইনি। বরং রমজানের বিষয়টি মাথায় রেখে পূর্বে নির্ধারিত প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকার জায়গায় ১৬০ টাকা করে দিয়েছিলাম। তিনি বলেন, পার্শবর্তী দেশের তুলনায় আমাদের দেশে দাম খুব বেশি নয়।
এদিকে এ দফায় দাম বাড়ানোর মধ্যদিয়ে গত প্রায় ১৫ মাসে নয় বারের মতো দাম বৃদ্ধি পেল সয়াবিন তেলের।
এর আগে সর্বশেষ গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। ওই সময় নির্ধারণ করা দাম অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা ও পাম তেল ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
কিন্তু তিন মাসের মাথায় আজ বৃহস্পতিবার আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হলো এক লাফে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা পর্যন্ত।
অথচ গত বছর জানুয়ারি মাসে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১১৫ টাকায়। মাত্র ১৫ মাসের ব্যবধানে সেই তেলের দাম প্রতি লিটারে বাড়ল ৮৩ টাকা। অর্থাৎ এই ১৫ মাসে দাম বেড়েছে ৭২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
গত কিছুদিন ধরে ভোজ্যতেলের বাজার ছিল অস্থির। সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি না করে ব্যবসায়ীরা নানান কারসাজি করছিলেন। বাজারে সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রায়ই বাজার থেকে সেই তেল উধাও হয়ে যেত। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঝে মধ্যেই বাজারে অভিযান চালিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করত।
ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীরা মার্চ মাসেই দাবি করেছিল লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর। অর্থাৎ তাদের দাবি ছিল প্রতি লিটার তেলের মূল্য ১৮০ টাকা করার। কিন্তু সরকার তাদের কথা আমলে নেয়নি। উল্টো রমজানকে সামনে রেখে গত ২০ মার্চ সরকার প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। একই সঙ্গে সরকার ভোজ্যতেল উৎপাদন ও বিক্রির ওপর থেকে ভ্যাট পুরোপুরি আর আমদানিতে ৫ শতাংশ রেখে বাকি সব ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। বাজারে ভোজ্যতেলের ঘাটতি দেখা দেয়। বলতে গেলে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যায়।
এনএইচবি/এমএমএ/