শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন
এবার হ্যাচারিতে দেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভিত্তিতে শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা।
চলতি মাসে ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে এ সফলতা অর্জিত হয়। গবেষক দলে ছিলেন মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহাআলী, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আওয়াল, মালিহা খানম, ফারজানা জান্নাত আঁখি ও মো. সাইফুল ইসলাম।
গবেষক দলের প্রধান ড. মো. শাহাআলী এ প্রসঙ্গে বলেন, শোল মাছের প্রজনন ও চাষ অন্যান্য মাছের তুলনায় অপেক্ষাকৃত জটিল। এরা অন্য মাছের মতো খৈল/কুঁড়া জাতীয় খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। ফলে পোনা তৈরির জন্য মা-বাবা ব্রুড মাছ তৈরি করা খুব কষ্টকর বিষয় ছিল। প্রথমে এদের প্রোটিন সমৃদ্ধ দেশীয় একটি খাবারে অভ্যস্ত করা হয়েছে। অতঃপর ব্রুড মাছকে হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে পোনা তৈরি করা হয়েছে।
এ মাছকে হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে এবং চাষের জন্য পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও চাষ ব্যবস্থাপনা কৌশল উদ্ভাবনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রে গবেষণা শুরু করা হয়। গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো হ্যাচারিতে চলতি এপ্রিল মাসে দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়। পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় দেশে শোল মাছ চাষে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে এবং মাছটি আকারে বড় হওয়ায় দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিএফআরআই থেকে পরিচালিত গবেষণা থেকে দেখা যায়, এ মাছের প্রজননকাল সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত হলেও এপ্রিল-আগস্ট এদের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম। পুরুষ মাছের তুলনায় স্ত্রী মাছ আকারে অপেক্ষাকৃত বড় হয়। এ মাছের ডিম্বাশয় এপ্রিল মাস থেকে পরিপক্ক হতে শুরু করে। এপ্রিল মাসে স্ত্রী মাছের জিএসআই মান গড়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং ফেকান্ডিটি (ডিম ধারণ ক্ষমতা) ১৩০০০-২১০০০। প্রতি গ্রাম স্ত্রী মাছে গড়ে ৮০-৯০টি ডিম পাওয়া যায়।
বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, দেশীয় শোল মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা ছিল ইনস্টিটিউটের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘ গবেষণার পর চলতি এপ্রিল মাসে শোল মাছের প্রজনন বিষয়ে সফলতা আসে। শোল মাছসহ ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ৩৪ প্রজাতির দেশীয় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে।
এসএন
