বাজারে তেলের ‘কৃত্রিম সংকট’, ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা
বাজারে ৫ লিটার সয়াবিন তেল নেই কয়েক দিন থেকে। তবে এক লিটার তেল ১৭০ টাকা, ২ লিটার ৩২০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি দামে কেনা, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। আবার তেল না দিয়ে অনেক কোম্পানি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন বিক্রেতারা।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) কারওয়ান বাজারে গিয়ে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
সরেজমিনে বাজারে গেলে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, ভোজ্যতেল নেই কয়েক দিন থেকে। পুষ্টি, বসুন্ধরা, তীর, রুপচাঁদা কোনো কোম্পানিই তেল দিচ্ছে না।
বিক্রেতারা বলছেন, মিলমালিকরা আগে থেকেই তেল না দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কাজে লাগিয়েছেন। তাই কয়েক দিন থেকে তারা কোনো তেল দিচ্ছে না। বেশি দাম নেওয়ার জন্য তারা তেল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ভোজ্যতেলের ব্যাপারে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার মো. সিদ্দিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা, রুপচাঁদা, কেউ তেল দিচ্ছে না। আপনি পারলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
কখন থেকে পাচ্ছেন না তেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ সপ্তাহ থেকে তেল নেই। কোম্পানিকে বলেন, সরকার বলছে তেলের কোনো সংকট নেই। অথচ ১০ থেকে ১৫ দিন আগের ডিও করার তেলও পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববাজারে বাড়ছে। তাই আমাদেরও বাড়বে। তবে কোম্পানি তেল দেবে না, এটা হতে পারে না। সরকার থেকেও বলা হয়েছে তেলের কোনো সংকট নেই। তাহলে এমন অবস্থা কেন?’
একই তথ্য জানান আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স মিলু স্টোরের ইয়াসিন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোনো তেল নেই। কয়েক দিন থেকে কৃত্রিম সংকট চলছে। কোম্পানি দিচ্ছে না তেল। তবে আগের কিছু এক লিটারের তেল আছে। ১৬০ টাকা লিটার। আর ৫ লিটার ৭৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে।’
এ সময় খুচরা বিক্রেতারা বলেন, তাহলে আমরা কি লাভ করব? জবাবে ইয়াসিন বলেন, ‘লোকসান করে তো ব্যবসা করা যাবে না। তেলের খারাপ অবস্থা চলছে। সরকারের উচিত আবার এই সংকট থেকে রক্ষা করা। তা না হলে ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যাবে তেলের লিটার।’
এদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেল না পাওয়ায় খুচরা বিক্রেতারাও বলছেন, ৫ লিটার নেই। তবে বেশি দামে কেনার কারণে এক লিটার ১৭০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। শুধু ওই কয়েকজন নয়, কারওয়ান বাজার থেকে শুরু করে মোহাম্মদপুরের কৃষিমার্কেটের অনেক দোকানে ভোজ্যতেল নেই বলে ব্যবসায়ীরা জানান। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের অজুহাতে এক মাস না যেতেই আবার তেলের সংকট শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো হঠাৎ করে জনগণের রান্নার তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পামতেলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর হবে। এই সুযোগে বাজার থেকে তেল হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। রমজান মাসের আগেই তেল নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়। বাধ্য হয়ে সরকার ট্যাক্স কমিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমার চেষ্টা করে। মিলমালিকরাও পামওয়েল ১৩০ টাকা লিটার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছে।
এবার রমজান মাসের আগেই ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মার্চে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। এর ফলে ২২ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পাম তেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমিয়ে ১৩০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬০ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলের দাম ৭৬০ টাকা, যা আগে ৭৯৫ টাকা ছিল। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, যা আগে ১৪৩ টাকা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে ওই দামে বাজারে কোনো তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিবার রাতে সিটি গ্রুপের (তীর) মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা মিলমালিকরা সরকারের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ঈদের আগে আর দাম বাড়াব না। আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১৩০ টাকা লিটার সরবরাহ করছি। ঈদ পর্যন্ত এই দামে বিক্রি করে যাব। ঈদের পরই আমরা সরকারের সঙ্গে বসব। তখন যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে দাম নির্ধারণ করব।’
জেডএ/আরএ/