পামওয়েলের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি মিলমালিকদের
এবার রমজান মাস আসার আগেই ভোজ্যতেলে শুরু হয় নৈরাজ্য। বাধ্য হয়ে সরকার ট্যাক্স কমিয়ে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কিছুটা কমানোর চেষ্টা করে।
মিলমালিকরাও পামওয়েল ১৩০ টাকা লিটার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু শুক্রবার হঠাৎ করে ইন্দোনেশিয়া পামওয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ খবরে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়তে শুরু করেছে। তারপরও মিলমালিকরা বলছেন, ঈদ পর্যন্ত আগের দামে, ১৩০ টাকা লিটার পামওয়েল বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পরে সরকার যে নির্দেশনা দেবে সেভাবে কমানো বাড়ানো হবে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো হঠাৎ করে, জনগণের রান্নার তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পামতেলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। যা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যকর হবে।
তবে বাংলাদেশের মিলমালিকরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। কারণ ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম পাম অয়েল উৎপাদনকারী দেশ। এতে পাম অয়েলের পাশাপাশি অন্যান্য ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাবে।
ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েলের কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব পড়বে-জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ গোলাম মাওলা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার এ নিষেজ্ঞার কারণে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে। শুধু বাংলাদেশ না সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সামনে আরও বাড়বে। কারণ এককভাবে তারা রপ্তানি করে থাকে।’
এলসি ওপেন করার পরই তো বাড়বে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবকিছু তো নিয়ম মাফিক হওয়ার কথা। কিন্তু অনেকে তা মানে না। এটার দেখার দায়িত্ব সরকারের।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের (তীর ব্র্যান্ড) মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার ফলে শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানসহ সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে বাজারে প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা মিলমালিকরা সরকারের কাছে প্রতিজ্ঞাবন্ধ। ঈদের আগে আর দাম বাড়াব না।’
‘আগের ঘোষণা অনুযায়ী ১৩০ টাকা লিটার সরবরাহ করছি এবং ঈদ পর্যন্ত করে যাব। ঈদের পরই আমরা সরকারের সঙ্গে বসব।
তখন যেভাবে নির্দেশনা দেবে ১০০ টাকা হলে ১০০, ২০০ টাকা হলে ২০০ টাকা লিটার দাম নির্ধারণ করব। কারণ একেবারে লোকসান করে তো ব্যবসা করা যাবে না। গত ২২ মার্চ আমরা নিজেই ১৩০ টাকা লিটার বিক্রির প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তার চেয়ে বর্তমানে বেশি দামে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই,’ যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রমজান মাসের আগেই ভোজ্যতেলে দাম বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গত মার্চে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল এবং পাম অয়েল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। এরফলে ২২ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে পাম তেলের দাম লিটারে তিন টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানান বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা আগে পাম তেলের লিটারপ্রতি খুচরা মূল্য ছিল ১৩৩ টাকা। একই সঙ্গে মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পাঁচ লিটারের বোতলের দাম নির্ধারণ করা হয় ৭৬০ টাকা, যা আগে ৭৯৫ টাকা ছিল। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা, যা আগে ১৪৩ টাকা নির্ধারিত ছিল।
জেডএ/এমএমএ/