তামাকমুক্ত দেশ গড়তে শুল্ক বাড়ানোর তাগিদ
বাংলাদেশ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারি দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৫ শতাংশের বেশি মানুষ ধূমপান করে। দেড় লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায় তামাকজনিত রোগে। আর্থিক ক্ষতি প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। তাই তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমাতে বেশি করে কর আরোপ করা দরকার। এ জন্য কর কাঠামোতে পরিবর্তন আনা দরকার। তা হলে এক শতাংশ কমে যাবে। এভাবে কয়েক বছরে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব। শনিবার (২৩ এপ্রিল) আহছানিয়া মিশন ঢাকা ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ কার্যালয়ে এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শারমীন রিনভী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের পরিচালক (গবেষণা) আবদুল্লাহ নাদভী।
মূল প্রবন্ধে আবদুল্লাহ নাদভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০১৬ সালে ঘোষণা করেছেন, ২০৪০ সালে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত দেশ হবে। বর্তমানে দেশে ৭৩ শতাংশ কর নেওয়া হয় তামাকে। যা নিউজিলান্ডে ৮২ শতাংশ ও অস্ট্রেলিয়ায় ৭৪ শতাংশ। তাই বর্তমানে সিগারেটসহ অন্যান্য তামাকজাত পণ্যে শতকরা হারে শুল্ক আরোপ করা হয়। এ পদ্ধতির পরিবর্তন করে সিগারেটে শলাকাপ্রতি সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ করতে হবে। এতে রাজস্ব সংগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি সিগারেটের ব্যবহারকারী কমবে। সিগারেটের বর্তমান শুল্ক কাঠামো বেশ জটিল। এতে শুল্ক হার বেশি হলেও সিগারেটের মূল্যে তার বিশেষ প্রভাব পড়ে না।
নাদভী সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করে বলেন, ‘প্রতি ১০ শলাকার নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম ৩৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ টাকা, মধ্যস্তরের সিগারেটের প্রতি প্যাকেট ৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা, উচ্চ স্তরের সিগারেটের প্রতি প্যাকেটের দাম ১০২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি প্যাকেটের দাম ১৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা দরকার। এ প্রস্তাব কার্যকর করা হলে সরকারের ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে। পাশাপাশি ধূমপায়ী কমবে ১৩ লাখ এবং ৯ লাখ তরুণ ধূমপান করতে নিরুৎসাহিত হবে।’
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের উপপরিচালক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘সরকার প্রধান শেখ হামিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা করেছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে সিগারেট ও অন্যান্য তামাকজাত পণ্যে কর বাড়ানোর বিকল্প নেই। তামাকে কর বাড়ালে বছরে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হবে।’
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া বলেন, ‘উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণে তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এতে দারিদ্র্য বিমোচন যেমন হবে, তেমনি তামাকজনিত রোগের পেছনে সরকারের ব্যয় কমে আসবে। মানুষকে বাঁচাতে হলে কার্যকর তামাক কর বাড়াতে হবে। আগামী অর্থবছরে তামাকে কর বাড়ানো হলে এক শতাংশ তামাকের ব্যবহার কমে যাবে। এভাবে কয়েক বছরে তামাক ব্যবহার অনেক কমে যাবে। বর্তমানে বছরে এক লাখ ৬১ হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে তামাক ব্যবহারে।’
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘তামাক নিয়ে সরকার উভয় সংকট আছে। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, আবার রাজস্বের জন্য তামাক খাতে নির্ভরশীলতা রয়েছে। গত বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। তবে ধূমপানে আর্থিক ক্ষতিও এর চেয়ে বেশি। তাই তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকের করবাড়াতে হবে।’
জেডএ/