শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কমবে
দেশের শেয়ারবাজারে শেয়ারের দরপতনের সীমায় আবারও পরিবর্তন আনল নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নতুন নিয়মে শেয়ারের দাম দিনে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। এত দিন এ সীমা ছিল সর্বোচ্চ ২ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে নতুন এ সীমা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গতকাল বুধবার (২০ এপ্রিল) এ নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
জানা গেছে, শেয়ারের দরপতনের সীমা ২ শতাংশে বেঁধে দেওয়ায় বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারণ কিছুদিন ধরে ২ শতাংশ দাম কমলেই বেশিরভাগ শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেন করতে পারছিলেন না। তাতে লেনদেনের পরিমাণও অনেক কমে যায়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে শেয়ারের দরপতনের সীমা বাড়ানোর কথা বলে আসছিলেন। বাজারসংশ্লিষ্টদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ সীমা বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত ৮ মার্চ শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এখন এ সীমা ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
দরপতনের সীমায় পরিবর্তন আনা হলেও মূল্যবৃদ্ধির সীমা আগের মতোই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে যেকোনো শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়তে পারবে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ পরিবর্তনের ফলে বাজারে ক্রেতা বাড়বে। কারণ দাম কমলে ক্রেতারা কম দামে শেয়ার কেনায় বেশি আগ্রহী হবেন।
এদিকে টানা পতন ঠেকাতে বাজারে বিএসইসির তদারকি বৃদ্ধির ফলে গত দুই দিনে সূচক ও লেনদেনে কিছুটা গতি ফিরেছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৭৬ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ বেড়েছে। এর আগের দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার ডিএসইএক্স সূচকটি ৪৮ পয়েন্ট বা পৌনে ১ শতাংশ বেড়েছিল। ফলে গত দুই দিনে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি ১২৪ পয়েন্ট বেড়ে আবারও ৬ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অথচ টানা কয়েক দিনের পতনে সোমবার সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে গিয়েছিল এ সূচক।
এ অবস্থায় পতন ঠেকাতে গত সোম ও মঙ্গলবার একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিএসইসি। আইন লঙ্ঘন করে শেয়ারের বিক্রয়াদেশ দেওয়ার অভিযোগে ৯টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫ জন অনুমোদিত প্রতিনিধি বা ট্রেডারকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর মঙ্গলবার লেনদেন শুরুর আগে সর্বনিম্ন দামে শেয়ারের বিক্রয়াদেশ দেওয়ায় ১৫টি ব্রোকারেজ হাউসের ১৫ জন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইওর কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। এর জেরে গত দুই দিনে দরপতন থেমেছে সূচকের। লেনদেনেও এসেছে গতি। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৬০৬ কোটি টাকা। সোমবার এই লেনদেন নেমে গিয়েছিল ৩৯০ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে লেনদেন বেড়েছে ২১৬ কোটি টাকা।
বাজারবিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে কমবেশি সব সময় নানা ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটে। এসব কারসাজির কারণেই বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ হঠাৎ বড় ধরনের উত্থান-পতন দেখা যায়। সব সময় যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব ধরনের কারসাজির বিষয়ে কঠোর হয়, তাহলে বাজারে কারসাজির প্রবণতা কমে আসবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আস্থা ফিরে পাবেন। কিন্তু বিএসইসি যখনই কারসাজির ঘটনা জেনেও চুপচাপ থাকে, তখনই বাজারের ওপর থেকে আস্থা কমতে থাকে বিনিয়োগকারীদের।
টিটি/