কোম্পানি দিব দিচ্ছি বলে তেল দিচ্ছে না: অভিযোগ ব্যবসায়ীদের
কোনো তেল নেই। গত সপ্তাহে রূপচাঁদা ৫ লিটার ৫ কার্টুন ও এক লিটার ৫ কার্টুন তেল দিয়েছে। অল্প সময়ে তা শেষ হয়ে গেছে। তাই দোকানে কোনো তেল নেই। সবাই শুধু দিব দিব বলেও দিচ্ছে না। সয়াবিন তেল না পাওয়ার ব্যাপারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজধানীর কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের মালিক আবু তাহের।
শুধু ওই বাজারই নয়, কারওয়ান বাজারেও সহজে তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা। তারা বলছেন, কোম্পানির লোকেরা দিব দিচ্ছি বলে চাহিদা অনুযায়ী তেল দিচ্ছে না। অপরদিকে সরকার ১৩৬ টাকা লিটার নির্ধারণ করলেও বেশি দামে ১৪০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। পামতেলও বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সোমবার (১১ এপ্রিল) বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজান মাসের আগে সয়াবিন তেল নিয়ে সিন্ডিকেট শুরু হয়েছে। ৯ রোজা চলে যাচ্ছে। তারপরও সিন্ডিকেট মুক্ত হতে পারছে না। মিলমালিকরা বলছে তেলের কোনো অভাব নেই। চাইলেই দেওয়া হবে। তারপরও তেলের পাইকারি মৌলভীবাজার, কৃষিমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা তেল পাচ্ছেন না। এরফলে বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। কারওয়ান বাজারের সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের সিদ্দিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘পুষ্টি ৫ লিটার ৭৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে, যার গায়ের মুল্য ৭৬০ টাকা। ২ লিটার ৩১৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৪০ টাকা ও পামওয়েল ১৩০ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানির তেল পাওয়া যায় না। তাই বিক্রিও করা হচ্ছে না।’
অপর দিকে একই বাজারের মিলু স্টোরের মো. তারেকও বলেন, ‘চাহিদা মতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। রূপচাঁদা এখনো কোনো তেল দিচ্ছে না। তবে তীর, ফ্রেশ ৫ লিটার গায়ে লেখা ৭৬০ টাকা থাকলেও ৭৪০ টাকা। ২ লিটার ৩১৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। এর গায়ে লেখা ৩১৮ টাকা। অনেক আগে অর্ডার দিয়ে এই তেল পাওয়া গেছে। তবে নতুন করে কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটররা ডিও নিচ্ছে না ‘অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘তেল বেশি থাকলে বিক্রিও বেশি হয়। ক্রেতারা জানতে পারে যে তেল আছে। তখন দোকানে আসে। কিন্তু মজুদ কম থাকায় অনেক ক্রেতা আসে না। তাই বিক্রিও কম হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, এবারে রমজানের আগেই বাজারে হাহাকার পড়ে যায় সয়াবিন তেলে। বাধ্য হয়ে সরকার ট্যাক্স ও ভ্যাট কমিয়েছে। এরপর মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে ২০ মার্চ বোতলজাত সয়াবিন তেলে আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা লিটার এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাত টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা লিটার নির্ধারণ করে সরকার। আর প্রতি লিটার পাম তেল ১৩৩ টাকা থেকে কমিয়ে ২২ মার্চ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও বেশি দামে খোলা তেল ও পামওয়েল বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
কৃষিমার্কেটের সিটি এন্টারপ্রাইজের আবু তাহের ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘বহু দিন থেকে তীর, বসুন্ধরা, রূপচাঁদা কোনো ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যাচ্ছে না। তারা দিব দিব করেও তেল দিচ্ছে না। আগে ১০০ থেকে ২০০ কার্টুন তেল থাকত দোকানে। গত সপ্তাহে ৫ লিটারের ৫ কার্টুন ও এক লিটারের ৫ কার্টুন দিয়েছে মাত্র। তা অল্প সময়েই শেষ হয়ে গেছে। অন্যরা দিব দিব করে দিচ্ছে না। এই হচ্ছে বাজারের চিত্র। কি আর করার। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোম্পানির লোক আপনাদের বলছে, তেলের সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের এসআরওরা তো বলছে নেই তেল। তাহলে তারা কি করছে। কৃষিমার্কেটে এসে দেখে যাক কি অবস্থা।’
একই বাজারের রূপসা রাইস এজেন্সির মালিক নুরুল আমিনও ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘কোনো তেল নেই। দেখেন আসলে তেল দিবে মিল থেকে কিন্তু সেই মিলের লোকের বলছে তেল নেই।’
এদিকে কারওয়ান বাজারের আলী রব স্টোরের রব হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সয়াবিন তেলের দাম ৫ লিটার ৮০০ টাকা থেকে কমে ৭৬০ টাকা ও এক লিটার ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন তেল ১৪০ টাকা লিটার বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে তেলের সংকট কাটছে না কেন? জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘৬ এপ্রিল মিলমালিকদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। তারা বলেছেন, তেলের কোনো অভাব নেই। মার্চে কম থাকলেও এপ্রিলে উৎপাদন সর্বোচ্চ অবস্থায় চলে এসেছে। কেউ তেল না পেলে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে মিল থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’
একই তথ্য জানান সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘ আগে যাই হোক বর্তমানে তেলে সয়লাব হয়ে গেছে। যার যতো দরকার চাইলে ট্রাকে তেল দেওয়া যাবে।’
জেডএ/