হয়রানি এড়াতে কর আদায়ে আলাদা প্রশাসন করার দাবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যারা নীতি প্রনয়ণ করছে তারাই রাজস্ব আদায় করছে। এ কাজ করতে গিয়ে কিছু কর্মকর্তা নিজেদের প্রজা ভাবছেন। আর ব্যবসায়ীদের চোর ও প্রজা ভাবছেন। তাই ব্যবসায়ীদের হয়রানি থেকে রক্ষা করতে রাজস্বনীতি থেকে কর প্রশাসনকে আলাদা করতে হবে। করের হার বাড়াতে ই-টিনধারিদের ভূমি অফিস, বিআরটিএ ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
শনিবার (২ এপ্রিল) প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় এসব তথ্য জানান আলোচকরা। আইসিএবির প্রেসিডেন্ট মো. শাহাদাৎ হোসেনের সভাপতিত্বে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনের আইসিএবির সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
'ম্যাক্রো ইকনোমি এক্সপেক্টেশন ফ্রম ন্যাশনাল বাজেট ২০২২-২৩' আলোচনা সভার আয়োজন করে আইসিএবি ও ইআরএফ। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইস্টিটিউশনের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাজেটে সরকারের সব কিছু উঠে আসে। তাই সুচিন্তিতভাবে সব দেখতে ও বিবেচনা করতে হবে। আমাদের দেশে রাজস্ব সমস্যা সবার জানা। ট্যাক্স জিডিপির অনুপাত মাত্র ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে ট্যাক্স পলিসি (কর নীতি) ও ট্যাক্স অ্যাডমিস্ট্রেশন ( কর প্রশাসন)। এটা হতে পারে না। তা আলাদা করতে হবে। এতে ব্যবসায়ীরা হয়রানি মুক্ত হবে।’
তিনি আরও বলেন, নামে মাত্র অটোমেশন হয়েছে। রিটার্ন দাখিলের নামে পায়ের জুতা ক্ষয় করতে হয়। কেন? সামনা সামনি না গেলে কর্মকর্তাদের মন ভরে না? এক নম্বর পলুটেড কান্ট্রির (দূষিত দেশ) খেতাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থায় আছে। আমদানি বাড়ছে, রপ্তানি বাড়ছে। এর প্রভাব ব্যালান্স অফ মেপেন্টে পড়েছে। আগে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার ঘাটতে খাকলেও বর্তমানে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন (২০০ কোটি) হয়েছে। ব্যাংকে জামানতের পরিমান কমে গেছে। এরফলে ঋণের পরিমানও কমে যাবে। শ্রীলংকার মতো টাকা নেই পরিস্থিতি হওয়ার আগে প্রতিরোধমুলক মেজাজে যেতে হবে সরকারকে। ভুল শুধরিয়ে নিলে শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন,'করোনায় বিভিন্ন খাতে যে প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হয়েছে তা আদায় করতে হবে। কারণ এর প্রায় টাকা ব্যাংকে। ব্যাংক ব্যবসা সবার জন্য লাভজনক নয়। তবে যারা আত্বীয় স্বজনকে দিতে চাই তাদের জন্য লাভজনক। এ জন্য ব্যক্তিস্বার্থে অনেকে ব্যাংকের জন্য তৎপর হয়ে উঠে।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম বলেন, বর্তমান অবস্থায় কর্পোরেট ট্যাক্স ও এআইটি কমাতে হবে। আমরা ঝামেলামুক্ত থাকতে ট্যাক্স দিতে চাই। কিন্তু এক শ্রেণির কর্মকর্তারা সরকারকে না দিয়ে অন্য খাতে জমা দিচ্ছে। ট্যাক্স কর্মকর্তারা ফাইল কেটেকুটে ঝামেলায় ফেলছে। তাদের ঝামেলার কারণে কর বাড়ছে না। তারা মনে করে ‘আমরা বাজা, তারা প্রজা।' তাদের কারণেই অনেকে হোয়াইট মানি ব্লাক মানি (সাদা টাকা কালো) করছে। এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মন্জুর আহমেদ বলেন, '১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম বাজেটে চ্যালেঞ্জ ছিলো। করোনাকালের সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে এবারের বাজেটও চ্যালেঞ্জের। বর্তমানে ভয়াবহ সংকট। তাই ট্যাক্স কমাতে হবে। ট্যাক্স কমালে রাজস্ব কমে না। ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে। দেশের সব চেম্বার ও অ্যাশোসিয়েশনের সদস্যরা কর প্রদানযোগ্যা। লাইসেন্স নিয়েই তারা ব্যবসা করে। তাই এসআরও জারি করে তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রাজস্ব আদায়কারি এক হওয়ায় তারা ঝামেলা করছে। তাই ট্যাক্স পলিসি ও ট্যাক্স কালেক্টর আলাদা করতে হবে। এ জন্য এনবিআরকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিভিত্তিক শিল্প কর প্রয়োগ করতে হবে।'
সভায় ইস্টিটিউট অব চার্টারড অ্যাকাউন্টেন্টস অফ বাংলাদেশ (আইসিএবি) এর প্রেসিডেন্ট মো. শাহাদত হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য বা অসমতা। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য। করের ৭০ শতাংশ আসেই পরোক্ষ কর থেকে। ৬০ লাখ টিনধারির মাত্র মাত্র ২৪ লাখ আয়কর দেয়। করদাতার সংখ্যা বাড়াতে ই-টিনধারিদের ভূমি অফিস, বিআরটিএ ও সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।'
সভায় ইআরএফ প্রেসিডেন্ট শারমীন রিনভী, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলামসহ ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
জেডএ/কেএফ/