একটু স্বস্তি সয়াবিন তেলে
সরকারের কঠোর নজরদারি ও ভ্যাট কমানোর কিছুটা সুফল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা দিয়েছে। প্রতি লিটারে কমেছে ৭ টাকা। বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে রাকিব জেনারেল স্টোরের রুবেল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘আগে ৭৯৫ টাকা বিক্রি করলেও আজ ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৭৬০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ২লিটার ৩২০ থেকে ৩২৫ টাকা, যা আগে ছিলোা ৩৩৫ টাকা।
২০ মার্চ নতুন করে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে আট টাকা কমিয়ে ১৬০ টাকা লিটার, পাঁচ লিটার ৭৬০ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম সাত টাকা কমিয়ে ১৩৬ টাকা লিটার নির্ধারণ করে সরকার এবং মিলমালিকরা। যা মিল গেটে ২১ মার্চ থেকে কার্যকর এবং বাজারে কার্যকর হতে আরও ৫-৭ দিন সময় লাগবে বলে ওই দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানিয়েছিলেন।
কারওয়ান বাজারের নসু স্টরের নসু ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘গায়ে ৭৯৫ টাকা লিখা থাকলেও ৫ লিটার পুষ্টি, তীর তেল ৭৬০ টাকা, ১ লিটার ১৬৮ এবং ২ লিটার ৩৩০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। একই বাজারের ইউসুফ স্টরের ইঊসুফও বলেন, ‘তেলের দাম কিছুটা কমেছে। ৫ লিটার ৭৬০ টাকা, ২ লিটার ৩২৫ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে নতুন রেটের তেল এখনো কোম্পানি দেয়নি। আমরাও আগের বেশি দামের তেল বিক্রি করছি’।
গত মাস থেকে তেল নিয়ে দেশে হই-চই পড়লে দফায় দফায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকে শুরু করে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় এমনকি মন্ত্রীপরিষদেও ব্যাপকভাবে আলোচনা হয়েছে। এরপর উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে জুন পর্যন্ত কমানো হয়েছে ভ্যাট।
এদিকে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকেও তীর, রূপচাঁদা, পুষ্টি, মেঘনা থেকে শুরু করে বসুন্ধরা মিলেও অভিযান পরিচালনা করেছে। এর প্রভাবে প্রথমে পাইকারি পর্যায়ে কিছুটা কমার পর বর্তমানে খুচরা পর্যায়েও দাম কমতে শুরু করেছে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে অসৎ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘উৎসবে বিশ্বে পণ্যের দাম কমানো হলে ভোক্তারা বেশি করে কিনেন। আর আমাদের দেশে চিত্র ভিন্ন। উৎসবে ব্যবসায়ীরা মজুদ করে দাম বাড়ায়। এফবিসিসিআই এর দায় নিবে না। তাই যেই করে হউক দাম কমাতে হবে রমজান মাসে।
মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা পালটাপালটি অভিযোগ করলে মিলে মিলে অভিযান করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ বিশেষ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর উদ্যোগ নেয় মিলে মিলে অভিযানের। এর পরিচালক ও উপ-সচিব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে মিলেমিলে অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মিলমালিকদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তেল না পাওয়া পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব মিলে অভিযান করা হয়েছে। এর সুফলও পাওয়া গেছে। অসাধু চক্রের কারসাজি রোধ করা হচ্ছে। মৌলভীবাজারে লিটারে দুই থেকে ৫ টাকা কমেছে। খুচরা বাজারেও কমছে। ভোক্তারা সুবিধা পাচ্ছেন।
উল্লেখ, তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় গত ১৪ মার্চ মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভা সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ভ্যাট কমানো কথা জানান। তারপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এসআরও জারি করে সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। এরপর উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ থেকে ভ্যাট তুলে নিয়েছে ১০ শতাংশ। এরপর তেলের দাম কমিয়েছে মিল মালিকরা। এর সুফল পেতে শুরু করেছে।
গত রবিবার (২০ মার্চ) দাম কমিয়ে প্যাকেট তেল লিটার ১৬০ টাকা, ৫ লিটার ৭৬০ টাকা, খোলা তেল ১৪৩ থেকে কমিয়ে ১৩৫ টাকা এবং সর্বশেষ পামওয়েলের দাম ১৩৩ থেকে কমিয়ে ১৩০ টাকা লিটার নির্ধারণ করেছে মিলমালিকরা।
জেডএ/