তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ালেও চলবে
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘করোনাকালে সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়ার পর বড়রা যেভাবে রক্ষা পেয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা তা পায়নি। এ জন্য তাদের টিকে থাকার চাপ বেড়েছে। এ মুহূর্তে সরকার তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম না বাড়ালেও অর্থনীতিতে চাপ আসবে না। কারণ এভাবে চলতে থাকলে আগামী জুন পর্যন্ত ব্যয় বাড়বে ৩২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। এই চাপ সামলানোর মতো সক্ষমতা সরকারের আছে। রবিবার (২০ মার্চ) সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির সম্মেলন কক্ষে‘পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন পথে’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, যেভাবে চলছে তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত তেল, বিদ্যুৎ ও এলএনজির দাম না বাড়ালেও তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ তেলে ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, বিদ্যুতে ৩ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা, এলএনজিতে ১৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ফ্যামেলি কার্ডের জন্য ৪৩০ কোটি টাকা দিতে হবে সরকারকে। আর ভর্তুকি না দিলে তেল ও গ্যাসের দাম সামান্য মূল্য বৃদ্ধি হতে পারে।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে এখন পর্যন্ত যে ঘাটতি আছে, তা সহনীয়। এ ছাড়া সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তারল্য আছে। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হবে না। আবার এই মুহূর্তে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং এসব পণ্যের দাম বাড়ানো সঠিক হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও গ্যাসের যে মূল্য তা স্বাভাবিক নয়। তাই কমাতে হবে। তবে এটা কবে কমবে তা কেউ বলতে পারবে না ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে। জ্বালানির মূল্যনীতি সংস্কার দরকার। তবে এই তিন মাসে ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই আগামীতে স্বচ্ছ ও যৌক্তিক নীতির মাধ্যমে ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে সামাল দেয়া কঠিন হবে না।’
এ সময় জ্বালানির বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক উল্লেখ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। দেশে জিডিপি কমে যাবে। বিভিন্ন কোম্পানি ১১৭ শতাংশ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে গণশুনানিতে। কিন্তু কোনো ক্রমেই এতো বেশি হতে পারে না। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হতে পারে। আগামী জুন পর্যন্ত সরবরাহের কোনো সমস্যা নেই। আগে বাড়লেও বর্তমানে স্থিতিশীলতা চলে এসেছে। সরবরাহের যে ভয় তা কেটে গেছে।’
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. তৌফিকুল ইসলাম, বিআইবিএমের ড. আহসান হাবিব।
জেডএ/