এজেন্ট ব্যাংকিং: কোনো ঋণ দেয়নি ১৩ ব্যাংক
সুবিধাবঞ্চিত এলাকার জনগণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৩১টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন দিয়েছে। তাদের ঋণ প্রদান, আমানত জমা ও রেমিট্যান্স প্রদানের সুযোগও দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন গ্রাহককে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৬৩ শতাংশ ঋণ দিয়েছে। এরপরে সিটি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। তবে সোনালী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সাউথইস্টসহ ১৩টি ব্যাংক এক পয়সা ঋণ দেয়নি প্রায় এক দশকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের শহরাঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার সুযোগ থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ এ সেবার বাইরে থাকছে। তাই অল্প ব্যয়ে প্রচলিত শাখার পাশাপাশি ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৭৮ হাজারের বেশি। এজেন্টের সংখ্যা হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার ও আউটলেটের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭টি।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে ২৯টি এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম ছিল। এক বছরের ব্যবধানে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেড়ে ৩১টি ব্যাংককে এ সেবার অনুমোদন দেয়। এসব ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেশে আমানত জমা হচ্ছে, ঋণ বিতরণ হচ্ছে। প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১ কোটি ৬ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। যা গত জুন পর্যন্ত ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। তিন মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বা ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানতও জমা হয়েছে ৩০ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। গ্রামে জমা হয়েছে ২৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা। ৫টি ব্যাংকে প্রায় ৮৬ শতাংশ আমানত জমা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ১২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা বা ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এরপরে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
এসব আমানত থেকে ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে ৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকসহ ৫টি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ৫ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এরপরে সিটি ব্যাংক ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ১৯ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ডাচ বাংলা ব্যাংক ৫২০ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ৩৪৮ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণ দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, আমানত থেকে গ্রাহকদের ১৯টি ব্যাংক ঋণ দিয়েছে। তবে প্রায় এক দশকে এক পয়সাও ঋণ দেয়নি সোনালী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, মেঘনা, সাউথইস্ট এবং সাউথ বাংলা এগ্রি অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক।
এসব ব্যাংক গ্রামাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আর শহরে ঋণ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে পুরুষদের ঋণ দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৭ কোটি টাকা। বাকি ১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ঋণ নারীসহ অন্যদের দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার ধকল না কাটতেই ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে পড়েছে। এ জন্য সরকার বিভিন্নখাতে ব্যয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। তা আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকও কম ব্যয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত লোকদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবার দিকে নজর দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ২০১৩ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং সুবিধায় আনতে বিভিন্ন ব্যাংককে অনুমোদন দেয়। বর্তমানে ৩১টি ব্যাংককে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আরও কয়েকটি আবেদন করেছে। তাদের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জিএম আবুল কালাম আজাদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ব্যাংকগুলো শর্ত মেনে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। তারা ঋণ, আমানত ও রেমিট্যান্সের ব্যাপারে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। অনেকে ঋণ দিলেও ১৩টি ব্যাংক কেন ঋণ দেয়নি তা পর্যবেক্ষণ করে বলতে হবে।
সোনালী ব্যাংক কোনো ঋণ না দেওয়ার ব্যাপারে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক মো. আফজাল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন না ধারায় কোনো মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জেডএ/এসএন