ভালো রেজাল্ট করায় ঝিনাইদহের সেই ছাত্রীকে অপহরণ
এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার কারণে নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে এ শঙ্কায় ঝিনাইদহের কলেজ ছাত্রীকে অপহরণ করেন যুবলীগের সাবেক নেতা গাফফার। এ ঘটনায় গাফফারসহ তার ২ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় অপহৃত ছাত্রীকেও উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৭ মার্চ) ভোরে মানিকগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন—আবু জার গিফারী গাফফার (৩৫), সাব্বির হোসেন (২২) এবং হাফিজুর রহমান (৪৬)। এ সময় তাদের থেকে ১ কৌটা এসিড সদৃশ্য বস্তু, ৩টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সোমবার দুপুরে কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ঝিনাইদহে একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হন। গত ৫ মার্চ বিকেলে ভিকটিম ও তার এক সহপাঠী প্রাইভেট শেষে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। তারা ঝিনাইদহ থানার শৈলকূপাতে এলে গ্রেপ্তার গাফফার ও তার সহযোগীরা ওই শিক্ষার্থীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যান। এরপর ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে ঝিনাইদহ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দেশব্যাপী জনরোষ তৈরি হলে মেধাবী ছাত্রীর পাশে দাঁড়ায় তার সহপাঠীরা। গতকাল ঝিনাইদহ শহরব্যাপী সারাদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ করে। ঘটনায় তার সহপাঠীদের আহাজারি ও তার বাবার আর্তনাদ দেশবাসীকে আবেগ আপ্লুত করে। যার ফলে র্যাব ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের ব্যপারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরে র্যাব-৪ ও র্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে মানিকগঞ্জ সদর এলাকা থেকে অপহরণ মামলার প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা অপহরণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা শিকার করছেন।
মঈন বলেন, গাফফার অপহরণ সম্পর্কে জানায়, ভিকটিম একজন মেধাবী ছাত্রী। সম্প্রতি ভিকটিম এসএসসিতে খুব ভালো ফলাফল করায় সাবেক যুবলীগ নেতা গাফফার ধারণা করেন যে ভিকটিম তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। মূলত এই কারণেই তিনি ভিকটিমকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দুই দিন আগে ঝিনাইদহ কোর্ট সংলগ্ন এলাকায় গ্রেপ্তার গাফফার তার সমমনাদের নিয়ে অপহরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে প্রাইভেট পড়া থেকে বাসায় যাওয়ার পথে রাস্তা থেকে অপহরণ করা হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, অপহরণ পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য গাফফার ভিকটিমকে প্রথমে রাজবাড়ীতে তার এক নিকটআত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে তার দুইজন সহযোগীকে পরিবর্তন করে নতুন দুজন সহযোগীসহ ভিকটিমকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। আশ্রয় না পেয়ে তৎক্ষণাৎ মাইক্রোবাস যোগে ভিকটিমকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পুনরায় ভিকটিমকে ফরিদপুরের নেওয়ার উদ্দেশে রওনা করে। পথে গাফফার ভিকটিমকে এসিড এবং দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, যাতে ভিকটিম কোন প্রকার চিৎকার বা আওয়াজ না করে। অবশেষে গোয়েন্দার জালে ধরা পড়তে হয়েছে তাদের।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/