সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে আত্মসাৎ, চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার
সেনাবাহিনী ও বিজিবিতে চাকরি দেওয়ার নামে কৌশলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এ চক্রের মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল (৪০), শামীম হাসান তালুকদার (৩৮) ও আলমগীর হোসেন (৪০)। এসময় তাদের থেকে ১টি ভূয়া সেনাবাহিনীর পরিচয়পত্র, ২ টি ভূয়া বিজিবির পরিচয়পত্র, ৩ টি ভূয়া নিয়োগপত্র, ১৬ পাতা ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ১ টি ব্যাংক চেক ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৬ টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
র্যাব বলেছে মূলত এরা সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করত। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এ প্রতারক চক্রটি সহজ সরল মানুষদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলত। ফাঁদে ফেলে কৌশলে তাদের সর্বোচ্চ লুটে নিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন।
র্যাব জানায়, বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে র্যাব-১ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, প্রতারক দলের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিরীহ বেকার যুবকদের টার্গেট করতো এবং অভিনব কায়দায় তাদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে জন জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, র্যাব-১ এর অভিযানিক দল দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য সকল ধরনের গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। গোয়েন্দা তৎপরতার ভিত্তিতে অবশেষে তাদের ধরা পড়তে হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে র্যাব-১ এর অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আসামি সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকরি প্রত্যাশী ও তাদের পরিবারের সাথে সুকৌশলে পরিচিত হয় এবং ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে আসামী তার পরিচিত কয়েকজন ঊধ্বর্তন সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সেনাবাহিনী অথবা বিজিবিতে চাকরি দিতে পারবে বলে জানায়।
তিনি বলেন, ভিকটিমদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে সেনাবাহিনী-বিজিবিতে বেসামরিক বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে বিশ্বাস অর্জন করে এবং একপর্যায়ে বেসামরিক পদে চাকরির জন্য আসামি ভিকটিমদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা নেয়। ভিকটিম ও ভিকটিমের পরিবার তাদের কথায় সরল বিশ্বাসে টাকা গুলো দিয়ে দেয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, এরপর প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের গ্রামের বাড়ি হতে মেডিকেল চেকআপ করার কথা বলে আসামিরা সেনাকর্মকর্তার পিএ পরিচয়ে আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে অপর আসামী ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা (লে. কর্নেল) পরিচয়দানকারী প্রতারক শামীম হাসান তালুকদারের সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য ঢাকা সেনানিবাস সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামিরা ভিকটিমকে একটি ভূয়া নিয়োগপত্র দেয়, যাতে সেনাবাহিনী-বিজিবির মনোগ্রাম সম্বলিত বেসামরিক পদে চাকরির নিয়োগপত্র শিরোনামে মুদ্রিত থাকে।
র্যাব-১ জানায়, এ নিয়োগপত্রে ভিকটিমের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষরসহ নিয়োগপত্রের পেছনে আঙ্গুলের ছাপ নেয় এবং কাউকে কিছু না বলে ভিকটিমদেরকে চুপচাপ বাড়ি চলে যেতে বলে। এরপর প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তি চুপচাপ বাড়িতে চলে আসে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সামসুজ্জোহা ওরফে জুয়েল এই চক্রের মূলহোতা। প্রাপ্ত তথ্যমতে তার নামে ইতোপূর্বে অস্ত্র আইন, নারী নির্যাতন, প্রতারণা ও মাদকসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। সে বর্তমানে ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
অধিনায়ক আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ২০১৫ সালের দিকে এ চক্রের অপর দুই সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। প্রতারক আলমগীর ও প্রতারক শামীম দুইজনই কম্পিউটার প্রিন্ট, ফটোকপি, অনলাইন জব এপ্লিকেশনের দোকানের মালিক। তাদের দোকানে অনলাইনে চাকুরির জন্য আবেদন করতে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই তারা বিভিন্ন বাহিনী ও সরকারি চাকুরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তথ্য সংগ্রহ করত। সেখান থেকে প্রাপ্ত চাকরি প্রার্থীদেরকেই তারা প্রাথমিকভাবে টার্গেট করতো।
প্রতারক শামসুজ্জোহা শুরু থেকেই নিজেকে বিজিবির সদস্য (হাবিলদার মেডি: এসিস্ট্যান্ট) হিসাবে ভুয়া পরিচয় প্রদান করে আসছিলো। ফলে, অনেকেই তার সাথে চাকরি পাবার আশায় যোগাযোগ করত বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস