ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাউদ্দিন
সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে কোটি টাকা আত্মসাৎ!
‘ভুয়া লেফটেন্যান্ট কর্নেল’ সালাউদ্দিনকে (৫৫) গ্রেপ্তারের পরর্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানায়, এ পরিচয়ে প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিতো সে। বেশ কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, সে কখনও কোম্পানির সিইও আবার মার্কেটিং ম্যানেজার কিংবা মার্চেন্ডাইজার, আবার কখনও দিতো সেনা কর্মকর্তার পরিচয়। এভাবেই বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতরাণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে সালাউদ্দিন ভূঁইয়া।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানীর নিকট ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছে প্রতারক সালাউদ্দিন ভূঁইয়া। সে কখনও বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার অথবা মার্চেন্ডাইজার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানীর নিকট হতে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের জন্য ক্রয়পত্র বিতরণ করত।
তিনি বলেন, ভূয়া ক্রয়াদেশ প্রাপ্ত হয়ে গার্মেন্টস এক্সেসরিজ কোম্পানিগুলো ক্রয়াদেশ অনুযায়ি সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারি করতো। পরবর্তীতে সালাউদ্দিন ভূঁইয়া পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে পণ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানীর নিকট বিক্রি করে দিতো। ভুক্তভোগীরা তার নিকট থেকে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে সে টাকা না দিয়ে বরং তাদের সাথে খারাপ আচরণসহ নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আইজিপি’র আত্মীয়, সাংসদের আত্মীয় ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করত।
খন্দকার মঈন আরো বলেন, প্রতারকের এমন প্রতারণায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র্যাব-১ এর নিকট আইনি সহায়তা কামনা করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। যার কারণে র্যাব ছায়াতদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় গত রাতে র্যাব-১ অভিযান চালিয়ে প্রতারক এ এম এম সালাউদ্দিন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে।
এসময় তার কাছ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাঁধাইকৃত ১ টি ফটোফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত ১টি করে গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, ৪ টি জাল লেটার প্যাড, ১ টি জাল সীল, ২টি জাল ক্রয়াদেশ, ২ টি জাল সোয়াচ প্যাড, ২টি চেক বই, ৩ টি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং নগদ ৯ হাজার ৮৩০ টাকা জব্দ করা হয়।
মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সালাউদ্দিন বিভিন্ন প্রতারণার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। বিগত প্রায় ৫ বছর ধরে বিভিন্ন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রতারণা করে আসছে সে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায় যে, সে কোটি টাকার অধিক আত্মসাৎ করেছে। বর্তমানে সে মহাখালীর একটি অফিসে সাবলেট ভাড়া নিয়ে বিগত ৩ মাস যাবত এমন কাজ পরিচালনা করে আসছিল বলে জানান তিনি।
র্যাব জানায়, সে কোনো ঠিকানায় ৬ মাসের বেশি অবস্থান করে না। এছাড়া ফটোশপ এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে মূলত প্রতারণার কাজে ব্যবহার করে থাকে। ইতোপূর্বে তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে আদালতে প্রতারণার মামলা ও বিভিন্ন থানায় ৩ টি অভিযোগ রয়েছে।
সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস