পুলিশ যখন লেগুনার হেল্পার!
টানা দুই দিন। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই। করেছেন লেগুনার হেল্পারি। পারিশ্রমিক পেয়েছেন ৬০০ টাকা। রাত হলে ঘুমিয়েছেন লেগুনার সিটেই। বলছিলাম একজন পুলিশ কর্মকর্তার কথা। নাম বিলাল আল আজাদ। তিনি যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। এভাবে লেগুনার হেল্পার সেজে ক্লু-লেস একটি হত্যা মামলার রহস্যজট খুলেছেন তিনি। গ্রেপ্তার করেছেন হত্যা মামলার চার আসামিকে।
চলন্ত লেগুনা থেকে এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৩ জানুয়ারি অজ্ঞাত আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন তার ছেলে।
পুলিশ জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকালেই খাইরুল ইসলাম নামের এক যুবক যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন।
খাইরুল জানান, তার বাবা মহির উদ্দিন (৫০) সকালে যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তে যাওয়ার জন্য বের হন। এরপর থেকে আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। খাইরুলের এমন অভিযোগ পেয়ে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির মৃতদেহটি দেখানো হলে খাইরুল শনাক্ত করেন যে মরদেহটি তার বাবা মহির উদ্দিনের। এরপর অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করেন খাইরুল ইসলাম। যাত্রাবাড়ী থানার মামলা নম্বর- ১১১।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিলাল আল আজাদ জানান, তদন্তভার পেয়েই গুলিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে ওই লেগুনাটি শনাক্ত করা গেলেও তার নাম্বার প্লেট দেখা যায়নি। লেগুনায় যাত্রী ওঠার সিঁড়িতে লাল রং ছিল। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে খুনীদের শনাক্তের চেষ্টা শুরু হয়। টানা দুই দিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেল্পারি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়াটার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির আখড়া থেকে নিউ মার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে চাষাড়া জালকড়ি রুটে তিনি লেগুনার হেল্পারি করেন। পারিশ্রমিকও পান।
বিলাল আল আজাদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি রুটে প্রায় এক হাজার লেগুনা যাচাই বাছাইয়ের পর নারায়াণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি এলাকার একটি গ্যারেজে ওই লেগুনাটি পাওয়া যায়। পরে লেগুনা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাড়িটি চালান ফরহাদ নামের একজন। তবে তিনি গত ২১ জানুয়ারি থেকে ছুটিতে আছেন।’
পরে ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ওই রাতে লেগুনা নিয়ে বের হয়েছিলেন মনজু। তিনি আগে হেল্পারি করতেন। পরে একে একে মনজু, আব্দুর রহমান, রিপন ও রুবেল নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে গত ২৭ জানুয়ারি তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত ওই রাতে তারা ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে লেগুনা নিয়ে বের হয়ে নারায়াণগঞ্জের সাইনবোর্ডে অবস্থান নেন। সেখান থেকে এক যাত্রীকে নিয়ে রওনা হলে ওই যাত্রী গাড়ি থেকে লাফিয়ে পালান। পরে তারা ফের সাইনবোর্ড মোড়ে অবস্থান নেন। তখন মহির উদ্দিন (৫০) ওই লেগুনাতে উঠলে তার কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত লেগুনা থেকে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে গুরুত্বর আহত মহির উদ্দিনকে হাসপাতালের নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, গ্রেপ্তারকৃতরা মহির উদ্দিনের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ইয়াবা সেবন করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এনএইচ/এমএসপি