মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত পলাতক আসামিদের ধরতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে আত্মগোপনে থাকা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আসামীদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সারা দেশে আত্মগোপনে রয়েছে যুদ্ধাপরাধ মামলার কয়েক হাজার আসামি। অনেকে এসব মামলা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে আছেন। কেউবা পেশা ও ভোটার আইডি পরিবর্তন করে আত্মগোপনে আছেন। এসব আসামী ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. আব্দুল খালেক তালুকদারকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আব্দুল খালেক নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার মৃত রুস্তম আলী তালুকদারের ছেলে। তিনি যুদ্ধের সময় নেত্রকোনা থেকে নানা ধরনের অপরাধ করে ঢাকায় চলে আসেন। এসব অপরাধের কারণে তার নামে মামলা হওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন।
দীর্ঘ সাত বছর পলাতক থাকার পর তার অনুপস্থিতিতে ট্রাইবুন্যাল ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুন্যাল) আইন ১৯৭৩ এর ৩ ধারায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার সাতটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। রায়ে আরও চার পলাতক আসামিসহ আব্দুল খালেক তালুকদারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তার মতো পলাতক এমন আসামিদের ধরতে এটিইউর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে পুলিশের বিশেষ ইউনিট এন্টি টেররিজম ইউনিটের (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইং) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সারা দেশে যুদ্ধাপরাধের মামলার আসামিদের ধরতে আমাদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া আছে। এজন্য আমরা যুদ্ধাপরাধের মামলার আসামিদের আইনের আওতায় আনতে মাঠে কাজ করছি।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামিকে আমরা আইনের আওতায় আনতে পেরেছি- এমনটা জানিয়ে আসলাম খান বলেন, তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে। পলাতক অনেক আসামি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।
এদিকে, গত রবিবার (৭ মে) চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী আলীম উদ্দিন খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে ধরার পর পুলিশ বলছে-ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার সাধুয়া গ্রামের আব্দুল গফুর খানের ছেলে আলীম উদ্দিন। তিনি শ্রীপুরের বেলদিয়া গ্রামে মেয়ে রিনা আক্তারের বাড়িতে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পুলিশের দাবি, আলীমের মতো এমন অসংখ্য আসামি আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আছে।
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুজ্জামান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামে তার মেয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও বলেন, আলীম উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের দায়ে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. আব্দুল মতিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-৩ জানায়, পলাতক আব্দুল মতিনকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা এ পর্যন্ত যে সমস্ত যুদ্ধপরাধের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করেছি তারা অধিকাংশ রাষ্ট্রদ্রোহী । অনেকে জামায়াতের কর্মী। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা তাদের রাজনৈতিক পরিচয় শিকার করেছেন।
লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলার যে সমস্ত আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন তাদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এসব অপরাধীদের আইনের আওয়ায় আনতে আমাদের বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
আরইউ/এমএমএ/