রাত হলেই অনিরাপদ হয়ে ওঠে রমনা পার্ক
রাত হলে অনিরাপদ হয়ে ওঠে রাজধানীর রমনা পার্ক। সন্ধ্যার পর এখানে রাত্রে বেশ নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এখানে যারা চলাফেরা করে ও বিনোদনের আশায় ঘুরতে আসে তারা অনেকটা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। অভিযোগ আছে- সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই এটি মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের আখড়া হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাতের বেলায় চলে ভাসমান যৌনকর্মী ও হিজড়াদের বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। চলাচলকারীদের দাবি রাতে অনেক সময় যানবাহন পাওয়া যায় না। হেঁটে গন্তব্যে যেতে হয়। কিন্তু রমনা পার্ক এলাকায় এলে হিজড়াদের যন্ত্রণা এবং মাদক সেবনকারীদের দেখা যায়। যার কারণে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার অভাবে থাকে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তার অভাবে অপরাধীদের দখলে এই রমনা পার্ক। সাধারণত রমনা পার্ক ব্যবহার করেন মানুষ বিনোদনের জায়গায় হিসেবে এবং অনেকে শরীর চর্চা হিসেবে এটি ব্যবহার করেন। রাজধানীতে বিনোদনের জন্য নেই পর্যাপ্ত পার্ক ও শরীরচর্চা কেন্দ্র। যার কারণে এটাকে খোলা ও পরিবেশসম্মত স্থান মনে করেন অনেকেই। রমনা পার্কে গিয়ে বিনোদনের খোরাক মিটিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি সরেজমিনে সন্ধ্যার পর রমনা পার্ক ঘুরে দেখা যায়, এটি মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের অপরাধের একটি স্থান হয়ে উঠেছে। এখানে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। সব অলিগলি যেন অপরাধীদের দখলে। মানুষের চলাচল করতে অনেকটা ভয়ে রয়েছেন। অনেকেই এ সমস্ত কারণে পরিবার নিয়ে রমনা পার্কে ঘুরতে যান না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানা ও শাহবাগ থানার অধীনে পড়েছে এই রমনা পার্ক। যদিও প্রতিনিয়তই এই পার্কের আশেপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দেন। দিনের বেলায় ভালো পরিবেশ থাকলেও রাতের বেলায় ভয়ংকর রূপ ধারণ করে এটি।
দেখা যায়, এই পার্কে সন্ধ্যা নামলেই বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। ভাসমান যৌনকর্মী ও হিজড়াদের আখড়ায় পরিণত হয়। বেড়ে যায় হিজড়াদের চলাচল। রয়েছে চুরি-ছিনতাইকারীদের উৎপাত। ফলে এসব স্থান দিয়ে রাতের বেলা পথচারী ও সাধারণদের একপ্রকার ভয়ের মধ্যে থেকেই চলাচল করতে হয়।
রমনা পার্কে পরিবার নিয়ে সকাল বেলায় প্রতিদিন আসেন জয়নাল আবেদীন। জয়নাল আবেদীন বলেন, একসময় এই পার্কে অনেক সময় কাটিয়েছি। এখন এটি আমাদের জন্য ব্যবহারের অনুপযুক্ত মনে হচ্ছে। আমার বাসার কাছে এটা, পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি কিন্তু বাইরের পরিবেশ একেবারেই ভালো না। মাদক সেবনকারীরা মদ-গাঁজা-ফেনসিডিল-ইয়াবাসহ অনেক কিছু এখানে সেবন করেন যা দেখার কেউ নেই। আগে প্রতিদিন অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পরে আসতাম এখন সকাল বেলায় এসে ঘুরে যায়।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে আরিফ ও শাওন দুই বন্ধু মিলে রমনা পার্কে এসে গল্প করেন এবং আড্ডা দেন। আরিফ ও শাওনের অভিযোগ রমনা পার্কের পরিবেশ একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। আনসার সদস্যদের সামনেও মাদক সেবনকারীরা মাদক সেবন করছে এবং অনেক মাদক ব্যবসায়ীরা ভেতরে প্রবেশ করে তাদের কাস্টমারকে মাদক দিচ্ছে। এটা অনেকটা প্রকাশ্যেও। তাদের অভিযোগ, রমনা পার্কে যদিও সিসি ক্যামেরা রয়েছে তাহলে কেন এসব মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের লোকজন ধরছেন না।
মহাখালী থেকে মাঝে মাঝে রমনা পার্কে ঘুরতে আসেন কাজী রফিক উদ্দিন। কাজী রফিক উদ্দিন বলেন, মাঝে মাঝে ছুটির দিনে রমনা পার্কে ঘুরতে আসি। সন্ধ্যার পর অনেক সময় বসে থাকি। কিন্তু এখন বসে থাকার কোন অবস্থা নেই। মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী, হিজড়াসহ অনেক যৌনকর্মীরা এসে বিরক্ত করে।
কাজী রফিকের দাবি, প্রকাশ্যে নিরাপত্তা কর্মীদের সামনে এরা ঘুরে বেড়ায়। তারা কিছু বলে না এবং অনেক জায়গায় সিসি ক্যামেরা রয়েছে পুলিশ সেগুলো নিয়ে কেন পদক্ষেপ নেয় না? রমনা পার্কে সাধারণ মানুষ বিনোদন নিতে আসেন কেউ পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন তাহলে আমাদের সেফটি কোথায়? অবিলম্বে রমনা পার্ক সাধারণ মানুষের জন্য উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।
তিন মাস আগে রমনা পার্কে ঘুরতে এসে আমার মোবাইল ফোন হারিয়েছি এমনটি অভিযোগ করে মো. রায়হান বলেন, রমনা পার্কে নিরাপত্তাহীনতায় বিনোদনের আশায় আসা মানুষ। এখানে চুরি ছিনতাই ও প্রতারণাসহ প্রকাশ্যে বেশ কিছু অপরাধ হয়। মোটামুটি এ বিষয়টি সবাই জানে কিন্তু এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখেছি বলে আমার মনে হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, রমনা পার্কে যারা বসেন সবাই নেশাখোর, প্রতারক, যৌনকর্মী বা বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত এটা ঢালাওভাবে বলা ঠিক না। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ আছে। তা ছাড়া এই পার্কে গিয়ে অনেকে মাদক বিক্রি ও সেবন করছে- এমন অভিযোগ আগেও ছিল এখনো আলোচনা হচ্ছে। তবে এই পার্কের বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের পুলিশ কাজ করছে। আমরা এর আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন আরেক কর্মকর্তা বলেন, রমনা পার্ক গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে এটাকে তারা দেখভাল করেন। তাদের নিজস্ব আনসার সদস্য রয়েছেন। তারা অনেক সময় পুলিশের সহযোগিতা চান এবং পুলিশ তাদের যথাযথ সহযোগিতা করে থাকেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি যদি এ সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু বলেন তাহলে আমরা অবশ্যই এসব অপরাধ দমন করতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সাধারণ মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দে রমনা পার্কে চলাফেরা করতে পারে সেজন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করব।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নিয়তি রায় বলেন, রমনা পার্ক সম্পর্কে অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির সদর দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে। যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে পুলিশকে জানালে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তা ছাড়া এখান থেকে যদি কেউ প্রতারণার শিকার হন অথবা চুরি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের শিকার হন তাহলে থানা পুলিশের সহযোগিতা নিন আশা করি ফল পাবেন।
কেএম/এসএন