রাজধানীতে বেড়েছে চুরি-ছিনতাই, পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার
প্রতিবছর রমজান মাস আসলেই রাজধানীতে ছিনতাই ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। এরসঙ্গে চুরি-ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। তাই চলতি রমজান মাস এবং ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি ঠেকাতে নজরদারি বাড়িয়েছে পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে সক্রিয় রাখা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু পুলিশের এই তৎপরতার মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকা, বিপণিবিতানগুলোতে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ। রমজান ও ঈদ সামনে রেখেই তৎপর হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। এসব ঘটনায় এলাকাভেদে অনেকগুলো অপরাধীচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে নগরবাসীর মধ্যে এখনই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। ঈদের সময় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা নগরবাসীর।
প্রথম রজমানেই বনানী চেয়ারম্যানবাড়িতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন মো. জাকির হোসেন। ঘটনার পর পরই তিনি বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার মোবাইল ও নগদ টাকা উদ্ধার যায়নি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম নামে এক ব্যক্তিগত বুধবার (২৯ মার্চ) ছিনতাইয়ের শিকার হন।
মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়ে বাসে করে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তার পকেট থেকে মোবাইল নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করলেও এখন পর্যন্ত ফোনটি উদ্ধার করা যায়নি।
সম্প্রতি লালবাগ মোড় হতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে নগদ ৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোনে হারিয়েছেন মোজাম্মেল মিয়া। তিনি বলেন, তারাবির পর তিনি রাস্তা দিয়ে একা হেঁটে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।
ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরা বলছেন, যে হারে ছিনতাই বেড়েছে তাতে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে শপিং মল, মার্কেট ও বাজারে গেলে, গাড়িতে চড়লে এবং রিকশায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে অধিক সতর্ক থাকতে হবে। না হলে যে কোনো সময় পকেট কাটা যেতে পারে কিংবা টানা পার্টির শিকার হতে পারেন।
জানা গেছে, চলমান রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ ঠেকাতে ইতিমধ্যে মাঠে সক্রিয় রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা। তারা রাজধানীজুড়ে অতিরিক্ত নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। একইসঙ্গে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র বলছে, রমজানের শুরু থেকেই প্রায় প্রতিদিন ডিএমপির বিভিন্ন থানা এলাকায় মোবাইল চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ৫০০ শতাধিক অভিযোগ এসেছে। এসব ঘটনায় কিছু মোবাইল উদ্ধারও করা গেছে।
রমজানে চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কেএন রায় নিয়তি বলেন, শুধু রমজান নয়, যেকোনো উৎসবে চুরি-ছিনতাই নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অতিরিক্ত সর্তক অবস্থানে রয়েছে। তবে, রাজধানী যেহেতু বড় একটি জায়গা বা লোক সমাগম বেশি হওয়ায় এসব অপরাধ একেবারে দমন করা সম্ভব নয়। কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাধারণ মানুষ সর্তক হলে এসব ঘটনা কমে আসবে।
ডিএমপির একটি সূত্র বলছে, রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে জনসাধারণের চলাচল এবং শপিং মলগুলোতে কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতাধীন এলাকায় বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। রমজান শুরুর আগে শুরু হওয়া এই অভিযান চলমান রয়েছে।
পুলিশ বলছে, রমজান ও ঈদে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, ছোঁ মারা পার্টির তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে মোড়ে, পাড়া-মহল্লা, বিভিন্ন শপিং মলে তৎপর থাকবে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ। শপিং মলে আসা নারী ক্রেতা এবং বিভিন্ন শপিংমলে কর্মরত নারী বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় দায়িত্বে থাকবেন নারী পুলিশের সদস্যরাও।
ডিএমপির সূত্র বলছে, বিভিন্ন মার্কেটে পকেটমারসহ যাদেরকে সন্দেহ হবে, তাদেরকেই তল্লাশি করা হবে। এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট বসানো হবে। মোটরসাইকেলে থাকবে টহল টিম। রমজানের প্রথম সপ্তাহ থেকেই নিরপাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যাতে মানুষ নগরীতে যাতায়াত এবং কেনাকাটা শেষে নির্বিঘ্নে বাসায় ফিরতে পারেন সেই ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরবাসীর নিরাপত্তায় ডিএমপির আওতাধীন পুলিশের ৫০টি থানা পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটে থাকা কমিউনিটি পুলিশকেও সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রমজান মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিক্ষুকরা রাজধানীতে আসেন। এসব বিষয়েও পুলিশের বিশেষ নজরদারি থাকবে। ফুটপাতে সারা বছর হকাররা যেসব জিনিসপত্র বিক্রি করেন, তাদেরকে ফুটপাতেই থাকতে হবে। ফুটপাতের বাইরে রাস্তার পাশে বা উপরে কোনো হকারকে বসতে দেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট জোনের ডিসিদের (ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশের প্রতিটা ইউনিট তৎপর রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া, পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের হাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমরা এসব বিষয়ে অনেক সর্তক রয়েছি। মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে এবার রমজানের শুরু থেকেই বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক সংখ্যক চোর, পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নগরবাসীকেও অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে তাহলে এসব ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।
এনএইচবি/এমএমএ/