ব্যবসায়ীর টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে যাওয়া প্রতারক গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে চলে যাওয়া এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামির নাম-নাজমুল হাসান। পুলিশ বলছে, সে ভুয়া ফেইসবুক পেইজে ইলেকট্রিক পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করত।
এ ব্যাপারে শনিবার (৫ নভেম্বর) ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আজিমুল হক জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোহাম্মদপুরের ফোরজি লাইট হাউজ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা মূল্যের বৈদ্যুতিক তার নিয়ে সেগুলো অনত্রে বিক্রি করে। রাতারাতি সেই টাকাগুলো নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ওই দোকানর মালিক থানায় এসে মামলা করলে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
ফোরজি লাইট হাউজের মালিক আনোয়ার হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি দোকানে এসে নিজেকে একজন ইলেকট্রিক পণ্য সাপ্লাইয়ার হিসেবে পরিচয় দেয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক পণ্য সাপ্লাই দেওয়ার কথা জানিয়ে দুই-একদিনের দিনের মধ্যে ১১ লাখ টাকার ইলেকট্রিক তার ক্রয়ের জন্য আরমান আমার কাছে একটি তালিকা প্রদান করে।
তিনি আরও জানান, গত ২৬ অক্টোবর সকালে জরুরী ভিত্তিতে ইলেকট্রিক তার সরবরাহের জন্য প্রতারক আরমান বারবার ফোন করতে থাকে এবং পণ্য পৌঁছে দেওয়া মাত্র টাকা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। পণ্যের বড় ক্রেতা ভেবে আমি বিষয়টি গুরুত্ব দেই এবং তার দেওয়া ভাষানটেক থানাধীন অফিসের ঠিকানায় ৭,৩৯,৩৪০/- টাকা মূল্যের ইলেকট্রিক তার আমার দোকানের ২ জন কর্মচারীসহ পিকাপে পাঠিয়ে দেই। ইলেকট্রিক তার বুঝে পেয়ে ওই প্রতারক তারগুলো অভিনব পন্থায় আয়েশা ইলেকট্রিক নামক একটি দোকানে ডিসকাউন্টে বিক্রয় করে টাকা নিয়ে সুকৌশলে পালিয়ে যায়।
ডিসি আজিমুল হক জানান, প্রতারণার ঘটনাটি অভিনব হওয়ায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। ফোরজি লাইট হাউজের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনায় জড়িত আসামিকে সনাক্ত করা হয়। মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ভাষানটেক থানা এলাকা থেকে আত্মসাৎকৃত ইলেকট্রিক তার উদ্ধার করে। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় আসামির অবস্থান সনাক্ত করার পর গত ২ নভেম্বর মিরপুর এলাকা থেকে একটি নাম্বার বিহীন প্রাইভেটকারসহ প্রতারণায় জড়িত মূল আসামি আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আসামির নিকট থেকে গ্রেপ্তারের সময় একটি নাম্বার প্লেট বিহীন প্রাইভেট কার, তার ছবি সম্বলিত মুশফিকুর রহমান নাম লেখা একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ডিএমপির এসআইভিএস এ ফিঙ্গার প্রিন্ট নিলে জাতীয় পরিচয় পত্র ডাটাবেজে তার নাম নাজমুল হোসেন, পিতা-এম. ডি সফিকুল আলম, মাতা-নাজমা আক্তার হিসেবে পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়-তার প্রকৃত নাম নাজমুল হাসান (জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর- ২৩৮১৮৪৬৭৯৫) । তার উদ্ধারকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট সমূহ, পাসপোর্ট জন্ম নিবন্ধন সনদ (নম্বর-১৯৯০২৬৯২৫০২০৭৯৫০২) দিয়ে করা। সেই জন্ম নিবন্ধন সনদটি ২০১৩ সালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, জোন-২ থেকে সংগ্রহ করে ও জাতীয় পরিচয় পত্রটি ২০১৫ সালে সংগ্রহ করে। সে জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে একাধিক নামে ব্যাংক একাউন্ট, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে। আসামি বিভিন্ন সময় উচ্চ পদস্থ কমকর্তা, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীর রূপ ধারণ করে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে রয়্যাল এআরকে গ্রুপ নামে ভুয়া কোম্পানির পেইজ খুলে তাতে নানা ধরনের ইলেকট্রিক পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। বিগত ৮ মাসে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে ২৩টি প্রতারণার অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে সে।
আজিমুল হক আরও জানান, উদ্ধারকৃত নম্বর বিহীন প্রাইভেটকারটি আসামি এই প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেন, যাতে ব্যবসায়ীরা সহজেই তার পরিচয় বিশ্বাস করে ও বিভ্রান্ত হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামির ব্যাংক কার্ড সমূহের তথ্য, লেনদেন বিবরণী, মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টসহ আর কোনও একাউন্ট রয়েছে কিনা তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
কেএম/এসআইএইচ