বিদেশে পাঠানোর নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা!
রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া মানবপাচারকারী ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা ও তার প্রধান সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, সহজ সরল মানুষদের টুরিস্ট ভিসায় বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে নির্যাতন করে আরও অধিক টাকা আদায় করত এই চক্রটি।
গ্রেপ্তার আসামির নাম মাহবুব উল হাসান (৫০) ও মাহমুদ করিম (৩৬)। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, ভিসা এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) র্যাব মিডিয়া সেন্টার, কারওয়ানবাজারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বহুসংখ্যক ভিকটিমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে যে, রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় একটি মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ গমনে ইচ্ছুক নিরীহ, দরিদ্র ও বেকার যুবকদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের সর্বশান্ত করছেন এবং বিদেশে গিয়ে তারা সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এরকম কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। পরে তদন্ত করে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
র্যাব জানায়, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মাহবুব উল হাসান (৫০) ও তার সহযোগী মাহমুদ করিম (৩৬) গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কৌশলে কাজ করতেন।
গ্রেপ্তারের আসামিদের কাছ থেকে ৫২১টি পাসপোর্ট, বিদেশে চাকরির জন্য তৈরিকৃত ভুয়া কোর্সের সনদ ৬৫টি, ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেট ৩০০টি, ভুয়া কোভিড ভ্যাক্সিনেশন সার্টিফিকেট ২২৫টি, সৌদি, ইরাক, কুয়েত, দুবাই, রোমানিয়া, কানাডা এবং কম্বোডিয়ায় চাকরির ভুয়া চুক্তিপত্র, টাকা গ্রহণ রেজিস্টার ৩টি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ১৫টি, রোমানিয়ান জাল ভিসা ৭টি, জাল কাগজপত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত মনিটর, সিপিইউ, কী-বোর্ড, মাউস, স্ক্যানার এবং প্রিন্টার উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধান ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এ পর্যন্ত তারা বিভিন্ন অসহায় দরিদ্র লোকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই চক্রের মূল হোতা মাহবুব উল হাসান এবং তার প্রধান সহযোগী মাহমুদ করিম। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে দালালের মাধ্যমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গমনে ইচ্ছুক লোকজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। এভাবে তারা গত দুই বছরে ৫২১টি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে যারা মধ্যেপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক তাদের থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে এবং যারা ইউরোপে যেতে ইচ্ছুক তাদের থেকে ছয় থেকে সাত লাখ টাকা করে জমা নেয়।
র্যাবের কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিদের ট্রাভেল এজেন্সি বা রিক্রুটিং এজেন্সি পরিচালনার কোনো লাইসেন্স নেই। স্বল্প সময়ে, বিনাশ্রমে অধিক লাভ বা অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। ভিকটিমরা বিদেশ গিয়ে কোনো কাজ না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার এবং আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হলেও তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/আরএ/