এক গাড়ি ৩৭ জনের কাছে বিক্রি
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার মানিকারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। প্রতারণার মাধ্যমে একই গাড়ি তিনি বিক্রি করেছেন ৩৭ জনের কাছে। এ ছাড়া ৪ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জাকিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তার ২০টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মুগদা থানায় জাকির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা তেজগাঁও জোনাল টিম। তদন্তে জানা যায়, আসামি মো. জাকির হোসেন পোর্ট থেকে স্বল্প দামে গাড়ি বায়না করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা নিত।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ ছাড়া বিক্রি করা গাড়ি আবার চুক্তির মাধ্যমে নিজেই রেন্ট এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ার চুক্তিতে নিত জাকির। একই গাড়ি এভাবে একাধিক ব্যক্তির কাছে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিক্রি করে জাকির। একই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়ি একাধিক জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করত জাকির। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারও সঙ্গে শুধু ইঞ্জিন নম্বর দিয়ে মাসিক কিস্তি পরিশোধের ভিত্তিতে কিছুদিন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করে পরবর্তীতে কিস্তি দেওয়া বন্ধ করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্নসাৎ করে। এ ছাড়া আগের বিক্রি করা গাড়ি স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় জাকির।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, প্রতারক জাকির প্রতারণার মাধ্যমে ৬০-৭০টি গাড়ি দেখিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবীর ৬০০-৭০০ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, সরকারের এমপি রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে তার মোট গাড়ির সংখ্যা ৬৭টি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিক্রি করা ২০টি গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করেছে। আরও ৪০টি গাড়ির প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। উদ্ধারের জন্য অভিযান চলমান আছে। একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে ৩৭ জনের কাছে স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছে।
পুলিশ বলছে, জাকিরকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ৫-৬ সহযোগীর মাধ্যমে প্রতারণা করতেন তিনি। বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে তিনি আনুমানিক হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, মুন্সীগঞ্জের একটি গ্রামেই ১২২টি গাড়ি বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করেছে জাকির। জাকির হোসেনের প্রতিষ্ঠান আরকে মটরস এর নামে এবং তার আত্নীয়স্বজনের নামে ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আরও বলেন, জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। তার প্রতারণার বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাকে আবারও রিমান্ডে নেওয়া হবে।
কেএম/এসজি