সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশি বন্ধু সেজে প্রতারণা, আটক ১১
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদেশি বন্ধু সেজে পার্সেল প্রতারণা চক্রের মূল হোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানা ডিএমপি গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
এর আগে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) তাদের রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
এ সময় বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ এটিএম কার্ড, চেক বই, পকেট রাউটার, সাড়ে তিন লাখ জাল টাকা, প্রতারণার মাধ্যমে আয় করা প্রায় সাড়ে ১১ লাখ এবং বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মূল হোতা বিপ্লব লস্কর (৩৪), তার সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪) এবং নাইজেরিয়ান নাগরিক চীডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডা কনসিকাউ (৩৫), ক্যামেরুনের নাগরিক নিগুজেনি পাপিনি (৩২)।
ডিবি প্রধান বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতারক সদস্যরা বিভিন্ন পন্থায় সাধারণ মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর, ইমেইল সংগ্রহপূর্বক ফেসবুকে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন ধরনের পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলত। সম্পর্কের একটি পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা, বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার-ইউরো ইত্যাদি পাঠানোর কথা বলে ফাঁদে ফেলত। এরপর সেগুলো ব্যক্তির নাম ঠিকানা উল্লেখ করে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠায়। প্রতারক চক্রের কলিং বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশি প্রতারকেরা বিভিন্ন অপারেটরের নম্বর ব্যবহার করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানায়, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে।
অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউস ফি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হবে। পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা টাকা পাঠিয়ে দেয়। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানায়, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা দিতে বার্থ হলে প্রতারিত ব্যক্তির নামে মানি লন্ডারিং আইন অন্যান্য করার মামলা হবে।
পুলিশ জানায়, প্রতারিত ব্যক্তি মামলার ভয়ে প্রতারক চক্রের দেওয়া বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠালে পুনরায় ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক ম্যানেজের কথা বলে আরও বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। প্রতারকেরা তাদের দাবিকৃত টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার ব্যক্তিকে সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিত।
হারুন অর রশীদ বলেন, বিদেশি প্রতারক চক্রটি গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের সহায়তায় এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটি প্রতারণায় ব্যবহৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির পাসপোর্ট জাল করে শত শত অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড নিয়েছে। এ সব ব্যাংকের চেক ও এটিএম কার্ড ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা তুলে নিত। আর এই টাকা তোলা এবং টাকা ভাগাভাগির কাজটি করত বিপ্লব লস্কর। সে বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে খোলা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি তদারকি করত। লস্করের সহযোগী হিসেবে কাজ করত ইমরান, শাওন এবং ইকবাল।
গ্রেপ্তারকৃত বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ শতাধিক মামলা রয়েছে। এ মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।
তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে থাকতে হলে সবাই সর্তক হতে হবে এবং পরিচিত ছাড়া অন্য কাউকে ফেসবুকে বন্ধু করা থেকে দূরে থাকবে হবে।
কেএম/আরএ/