ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ১০ বিয়ে, আসলে গ্রিল মিস্ত্রী
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে অভিনব প্রতারণার অভিযোগে মামুন ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) সিআইডির সাইবার পুলিশের একটি চৌকস টিম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করে অভিযুক্ত প্রতারক মামুনকে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন আমতলী থেকে গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) এস এম আশরাফুল আলম।
এস এম আশরাফুল আলম বলেন, প্রতারক মামুন ইসলাম পেশায় গ্রিল ওয়ার্কশপের কর্মচারী। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপ-সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা আবার কখনো ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পরিচয় দিতেন।
সিআইডি জানায়, মামুন প্রতারণার সুবিধার্থে নিজের আসল পরিচয় গোপন করে তথ্য অবিকৃত রেখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তার শরীরের অবয়বের সঙ্গে মিলে যায় এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরিহিত কিংবা মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যায় না এমন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি।
মামুনের টার্গেট বিয়ের পর ব্ল্যাকমেলিং এমনটা জানিয়ে এস এম আশরাফুল আলম বলেন, মামুনের বেশি আগ্রহ বিভিন্ন বয়সী নারীর প্রতি। সরকারি কর্মকর্তা সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ছবি ব্যবহার করে মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সম্পর্কের এক পর্যায়ে তিনি ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। যদি কেউ তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিতেন, তাহলে মামুন আত্মহত্যা করবে বলে ব্ল্যাকমেইল করে রাজি করাতেন। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।
সিআইডি জানায়, এক নারীর সঙ্গে প্রতারক মামুনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় মামুন নিজেকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হলেও মামুন কখনো ভিকটিমের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছে অথবা তার ছুটি হচ্ছে না এ রকম অজুহাতে সরাসরি বিয়ে করতে আসতে পারছে না বলে জানান। একপর্যায়ে মামুন ভুক্তভোগীর নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া নিকাহনামা প্রস্তুত করে নির্ধারিত ঠিকানায় কুরিয়ার করে পাঠান। ওই নারীকে কাবিননামায় স্বাক্ষর করে আবার মামুনের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলে।
ভুক্তভোগী নারী সরল বিশ্বাসে মামুনের কথামতো কাজ করার কিছুদিন পর মামুন তার বাসায় যান। এরপর ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে কিছুদিন একসঙ্গে বসবাস করেন। ভুয়া বিয়ের পর প্রতারক মামুন নারীর আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলতেন। আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় ভিডিও কলের স্ক্রিন রেকর্ড করে সেই ভিডিওগুলো নিজ মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখেন মামুন।
পরে ভিডিওগুলো অনলাইনে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করতে থাকে। এভাবে সে ভিকটিমদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।
একপর্যায়ে ভিকটিম নারী প্রতারক মামুনের প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হয়ে ডিএমপির পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের ধারাবাহিকতায় মামুনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসএসপি এস এম আশরাফুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারের সময় মামুনের কাছ থেকে ৫টি নকল নিকাহনামা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির ভুয়া অফিস আদেশের কপি ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
মামুনের আসল নাম মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে কমপক্ষে ১০টি বিয়ে করেছেন। তার মোবাইলে ৫০ এর বেশি নারীর সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথন ও অসংখ্য আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস