'যৌন সম্পর্কে অতিষ্ঠ হয়ে ডায়নাকে হত্যা করেন লাদেন'
"শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে বাসার টেবিলে থাকা হাতুড়ি দিয়ে ডায়নার মাথায় আঘাত করেন লাদেন। মাথায় ও হাঁটুতে উপর্যুপরি আঘাত করায় ডায়না রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। এসময় লাদেন দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে বন্ধ মূল ফটক টপকে পালিয়ে যান।"
উপরে লিখিত অংশটি পড়ে মনে হতে পারে হলিউডের কোনো অ্যাডাল্ট চলচ্চিত্র বা বিকৃত যৌনতা নির্ভর উপন্যাসের খন্ডচিত্র। কিন্তু তা নয়। এমনটাই ঘটেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগে। হত্যাকাণ্ডের মূল আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এমন বর্ণনাই উঠে এসেছে।
যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের থার্ড জেন্ডার মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না (৪৮) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার।
পুলিশ জানায়, ২৭ আগস্ট বিকেলে গোলাপবাগের একতলা বাড়ির কক্ষ থেকে ডায়নার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৯ আগস্ট শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে শোয়েব আক্তার লাদেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন লাদেন।
ডিসি জিয়াউল আহসান তালুকদার বলেন, ডায়নারা ছয় ভাই-বোন, সবাই আমেরিকার সিটিজেন। দুই বছর আগে ডায়না দেশে এসে ওই বাসায় বসবাস করছেন। তাই বাংলাদেশে তার কাছের কোনো স্বজন নেই। ডায়নার এক ফুফাতো ভাইয়ের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। তার ওই ফুপাতো ভাই ডায়নার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তাই পুলিশকে খবর দেন।
জিজ্ঞাবাদের বরাত দিয়ে জিয়াউল আহসান তালুকদার বলেন, গত ১৬ আগস্ট এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বাড়ির ফটক টপকে পালিয়ে যান লাদেন। লাদেন ডায়নার বাসায় কাজ করতেন। যখনই প্রয়োজন হতো, তখনই ডায়না তাকে ডাকতেন। এভাবেই তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বাইরের কারও সঙ্গে মিশতেন না। তবে কিছু তরুণ তার বাসায় মাঝে-মধ্যে আসা-যাওয়া করতেন।
ডায়না তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ছিলেন এবং তিনি সমকামি ছিলেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে লাদেন বিয়ে করেন। বিয়ের পরও লাদেন এবং ডায়নার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু লাদেনের বিয়ে ও নতুন জীবনকে ডায়না কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
তিনি বলেন, লাদেন ডায়নার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে মুক্ত জীবনে ফিরতে চাইতেন। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ডায়না লাদেনকে ছাড়তেন না। তিনি লাদেনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতেন, বিনিময়ে অর্থ দিতেন। ১৬ আগস্ট শারীরিক সম্পর্কের সময় ডায়না হত্যা করে পালিয়ে যান লাদেন।
ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার জিয়াউল আহসান বলেন, একতলা ওই বাড়ির দেয়াল অনেক উঁচু ছিল। তাই এতদিন মরদেহ পড়ে থাকার পরও আশপাশের কেউ টের পাননি।
আসামি লাদেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন এবং আদালতে সেসব জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস