ইমিগ্রেশন অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা, গ্রেপ্তার ২
বিদেশি পার্সেলের কথা বলে অভিনব প্রতারণা ফাঁদ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- জাহিদুর রহমান নিশাদ (২৮) ও অপু আহম্মেদ (২৩)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস বিকাশ ও নগদ নম্বরসহ প্রাতারণার কাজে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়।
সিআইডি জানায়, ইমিগ্রেশন অফিসার পরিচয়ে বিদেশি পার্সেল এসেছে বলে কবির হোসেন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে দেড় বছরে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা। যখন কবির হোসেন বুঝতে পারেন যে তিনি প্রতারিত হয়েছেন তখন তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টারে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশনসের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) এস এম আশরাফুল আলমের নির্দেশনায় এবং সহকারী পুলিশ সুপার কাজী আবু সাঈদের নেতৃত্বে একটি দল সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে এই চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) বিকেলে সিআইডির মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কবির হোসেনের ইমোতে একটি ফোন আসে। স্যার আপনি কবির হোসেন বলছেন? আমি ঢাকা ইমিগ্রেশন থেকে লামিয়া বলছি। আপনার নামে একটি বিদেশি পার্সেল এসেছে। যিনি এই পার্সেলটি পাঠিয়েছেন তিনি কাস্টমস ফি অপরিশোধিত রেখেছেন। তাই পার্সেলটি ছাড়াতে আপনাকে কাস্টমসের ফি বাবদ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। পার্সেলটি পাওয়ার জন্য কবির হোসেন প্রতারক চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। পার্সেলের প্রলোভনে কবির হোসেন প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেওয়ার দুই-তিন দিন পরে কবির হোসেনকে কাস্টমস অফিসার আরেফিন পরিচয়ে ভিন্ন একজন ইমো নম্বরে ফোন দিয়ে বলেন, আপনার নামে যে, পার্সেলটি এসেছে সেটি আমরা স্ক্যান করে অবৈধ ইউএস ডলার পেয়েছি। আপনার নামে এখন মামলা হবে। এতে ভয় পেয়ে যান কবির হোসেন। কথিত কাস্টমস অফিসার আরও বলেন, আপনি যদি মামলা খেতে না চান তবে কাস্টমস ফি বাবদ আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। কবির হোসেন প্রতারক চক্রের দেওয়া কয়েকটি নগদ ও বিকাশ নম্বরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান।
তিনি বলেন, কিছুদিন পর কাস্টমস অফিসার আরেফিন ইমোতে ফোন দিয়ে কবির হোসেনকে জানান, আপনাকে বাঁচাতে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে গেছি। আমি বিপদে পড়লে আপনিও বিপদে পড়বেন। এখন আপনার এবং আমার বিপদ থেকে রেহাই পেতে আরও টাকা লাগবে। কবির হোসেন তাদের কথায় গুরুত্ব না দিলে প্রতারক চক্রটি কৌশলে তার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে ভীতি প্রদর্শন করে আরও টাকা চাইতে থাকে। ই-মেইলের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি তাকে জানায় অবৈধ ইউএস ডলার আনায় আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আপনি টাকা না দিলে আপনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হবে। এতে কবির হোসেন ভয় পেয়ে আরও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাঠান।
তিনি বলেন, এভাবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে কবির হোসেনের কাছ থেকে ১০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডিএমপির পল্টন থানায় মামলা করা হয়েছে।
কেএম/এএস