মন্দির সেবায়েতের আত্মহত্যা, গ্রেপ্তার ৩
রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বর কেন্দ্রীয় মন্দিরের সেবায়েত পরিক্ষিত দাসের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর বিভাগ। সোমবার (২৯ আগস্ট) রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ডা. বিপ্লব বিজয়ী হালদার (৪৬), সুমন সাহা (৫৩), বাদল সরকার (৩৫)।
ডিবি জানায়, মন্দিরের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য চুরির অপবাদ দেওয়ায় ভিকটিম আত্মহত্যা করে।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি পুলিশের প্রধান ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ এক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা।
পুলিশ জানায়, গত ১৬ আগস্ট পরিক্ষিত দাসের ফাঁস দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সময় মরদেহটি মন্দিরের সিঁড়ির দ্বিতীয় তলার রেলিংয়ের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল।
ডিআইজি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ভিকটিম পরিক্ষিত দাস ঢাকার কাফরুল থানাধীন কেন্দ্রীয় মন্দিরে ঢাকা এর তত্ত্বাবধায়ক (সেবায়েত) হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং মন্দিরের ভিতরেই একটি কক্ষে বসবাস করতেন। গত ১৬ আগস্ট সকাল ৬ টার পর মন্দিরের লোকজন দেখতে পায় যে, মন্দিরের সেবায়েত পরিক্ষিত দাসের মরদেহ মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় ওঠার রেলিং এর সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলে আছে। পরবর্তীতে মন্দিরের অন্যান্য লোকজন এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৫ আগস্ট রাত ১২ টার দিকে সেবায়েত পরিক্ষিত দাস একটি ব্যাগ নিয়ে মন্দির হতে বের হওয়ার সময় আসামি সুমন সাহা তাকে বাধা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরেই আরো দুই আসামি ডা. বিপ্লব বিজয়ী হালদার ও বাদল সরকার মন্দিরে এসে ভিকটিমের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় ভিকটিম পরিক্ষিত দাস আসামিদের নিকট হাত ও পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরবর্তীতে তারা পরিক্ষিত দাসকে মন্দিরে রেখে চলে গেলে আসামিদের প্ররোচনায় ভিকটিম গত ১৬ আগস্ট রাতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনার দিন রাতে পরিক্ষিত দাস একটি ব্যাগের মধ্যে মন্দিরের ফল, আটা ও চিনি নিয়ে যাওয়ার সময় সুমন সাহা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। পড়ে বাকী দুই আসামি ঘটনাস্থলে আসলে সেবায়েত পরিক্ষিত দাস তাদের কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের কাজ আর করবেন না বলে আশ্বাস দেন।
পুলিশ জানায়, ডাঃ বিপ্লব বিজয়ী হালদার, সুমন সাহা ও বাদল সরকার ওই মন্দিরের যথাক্রমে সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত পরিক্ষিত দাসের ছেলে ভক্ত দাস মন্দির পরিচালনা কমিটির শীর্ষ ৩ নেতার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেন। পরে ওই মামলায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলায় ভক্ত দাস উল্লেখ করেন, তার বাবা মন্দিরের সেবায়েত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি মন্দিরের ভেতর একটি রুমে আরও দুইজনের সঙ্গে থাকতেন। ঘটনার দিন লোকমুখে শুনতে পান তার বাবা মন্দিরের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় চলে আসি। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে বাবার মৃতদেহ দেখতে পাই। এরপর আমরা জানাই বাবা আত্মহত্যা করতে পারেন না।
কেএম/এএস