'ছিনতাই করেই সংসার চলে তাদের'
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা এবং তেজগাঁও এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি এবং ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এসময় তাদের কাছ থেকে-অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। শনিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩।
র্যাব বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। ফলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত।
রবিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের অর্ধশতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা হলো- মিজানুর রহমান (২১), সোহেল (২০), মাসুদ রানা (২১), সাব্বির (২২), আবু বকর সিদ্দিক (২২), শাকিল (২০), নাঈম মোল্লা (২০), সালমান (২৬), জালাল হোসেন (২১), শাওন (২২), শহিদুল ইসলাম (৪০), রফিক (৩৩), আজিজুর(৩৬), সৈকত মন্ডল (১৯), আরিফ গাজী (২৬), জনি (১৮), রুবেল (২৮), আফজল (১৮), দ্বীন ইসলাম (২৩), তুহিন (১৮), রবিউল আউয়াল হৃদয় (২২), আরমান (২২), সানোয়ার হোসেন (৩১), রুবেল (৩৪), সোহেল (৩৫), শান্ত (২৫), আজাদ (৩৫), আনিছুর রহমান, আকাশ (২২), নাইম খান (১৬), আপন মিয়া (২০), নাজমুল হোসেন (২৮), মাসুম মিয়া (২৮), শান্ত (২০), সোহেল মাতব্বর (২৩), হৃদয় (১৯), সোহরাব (১৯), ইয়াছিন ব্যাপারী (২২)।
আসামিদের কাছ থেকে ১২ টি মোবাইলফোন, ৩ টি সুইচ গিয়ার (চাকু), ৩ টি অ্যান্টি কাটার, ১২ টি ব্লেড, ১ টি কাঁচি, ৬ টি চাকু, ৩ টি ক্ষুর, বিষাক্ত মলমের ৭ টি কৌটা, ২ টি বিষাক্ত স্প্রে এবং নগদ ৮ হাজার ১১০ টাকা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারী সদস্যরা ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ পানীয়র মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। ওই বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এছাড়াও কখনো ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মুখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। সে সময়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যরা সীমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে পড়েন। তারা স্বজনদের খোঁজে দিশাহারা হয়ে পড়েন। ভুক্তভোগীরা এসব ছিনতাইকারী সদস্যদের খুব কম ক্ষেত্রেই সনাক্ত করতে পারেন। ফলে এসব ছিনতাইকারী সদস্যরা নির্বিঘ্নে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। এ সকল ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক আশ্বাস দেন, রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘ্নে স্বস্তির সাথে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এলক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস