ডিম ডাকাতির সময় ৬ ডাকাত আটক
সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। আর ঠিক এ সময় ডিম ডাকাতি করছে একটি চক্র। বর্তমানে বেড়েছে ডিমের বাজারেও লেগেছে আগুন। খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম এখন ৫০ টাকা। এতে ডিমপ্রতি দাম পড়ে সাড়ে ১২ টাকা। এর আগে কখনো দেশে এত দামে মানুষকে ডিম কিনতে হয়নি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
ঠিক এমন সময়ে একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র সিদ্ধান্ত নেয় ডিমের ট্রাক ডাকাতি করার। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়কে একটি ডিমবোঝাই মিনি ট্রাকের গতিরোধ করে চক্রটি। ট্রাকটিতে ২৫ হাজার ডিম ছিল।
ওই ট্রাকে থাকা চালক ও চালকের সহকারীর প্রথমে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস নামের একটি বাসে উঠানো হয়। তারপর তাদের হাত-পা বেঁধে এবং মুখ ঢেকে প্রহার করে ডাকাতেরা। ওই বাসটি ডাকাতির কাজে দেড় বছর ধরে ব্যবহার করে আসছিল চক্রটি। চক্রটি সাধারণত পণ্যবাহী ট্রাক ডাকাতি করে থাকে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রথমে চালক ও চালকের সহকারীকে প্রহার করে ট্রাকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাতেরা। এক পর্যায়ে র্যাব-১১-এর একটি দল বাসটিকে ধাওয়া করে। সে সময় বাসের জানালা ভেঙে দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। আর, মূলহোতাসহ ছয় জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া চালক ও চালকের সহকারীকে উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় বাসটি।
আটক করা ব্যক্তিরা হলেন-সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সর্দার মূসা আলী, নাঈম মিয়া, শামিম, রনি, আবু সুফিয়ান ও মামুন। জব্দ করা হয় দুটি চাপাতি, একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি ছোরা। র্যাব জানায়, আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ভুলতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র্যাব-১১-এর টহল চলাকালীন একটি ডিমবোঝাই পিকআপের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা যায়। পরে টহল দল পিকআপটির গতিরোধ করে।
র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ওই পিকআপ থেকে দুজন ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। আটক করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্নতা প্রকাশ পায়। পরে তাদের তল্লাশি করে একটি চাপাতি ও একটি চাইনিজ কুড়াল জব্দ করা হয়।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘আটক করা দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা পিকআপের চালক ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে মারধর করা হয় তাদের। তারপর ডাকাত দলের সর্দার মূসা এবং তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায় এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যেরা পিকআপের চালক ও সহকারী থাকা বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়। আগে আটক হওয়া দুজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যাণের বাসটি ধাওয়া করে র্যাব।
‘এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদলের সদস্যেরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে চার জনকে আটক করে র্যাব। এ ছাড়া আরও কয়েক জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়,’ যোগ করেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এ চক্রটির ১০ থেকে ১২ জন সদস্য বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ পোশাককর্মী, গাড়ির চালক ও চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে। কেউ আবার রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার হিসেবেও কাজ করে থাকে। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।
এ চক্রটি মূলত তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত করে থাকে। মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টসের পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এ দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রি এবং কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য নিশানা করা পণ্যবাহী যানের পিছু নেয়। পরবর্তী কালে সুবিধাজনক স্থানে নিশানা করা পণ্যবাহী গাড়িটিকে বাসের মাধ্যমে গতিরোধ করে এবং দ্রুত পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও সহকারীকে এলোপাতাড়ি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়। পরে পণ্যবাহী গাড়ির চালক ও সহকারীকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবি করে। ডাকাতি শেষে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাঁধা অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।
তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসা পণ্যবাহী গাড়িটি চালিয়ে ডাকাতির পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্বনির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল খালাস করে।
আকটকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে বলে জানান র্যাব এই কর্মকর্তা।
কেএম/এমএমএ/