পরকীয়ার জেরে খুন, গ্রেপ্তার রেজাউল চিকিৎসক জান্নাতুলের স্বামী
রাজধানীর পান্থপথের আবাসিক হোটেল থেকে নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার রেজাউল করিম ওরফে রেজা ওই চিকিৎসকের স্বামী। তাদের বিয়ের ব্যাপারটি পরিবারের লোকজন জানতেন না।
শুক্রবার (১২ আগস্ট) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) তাকে চট্টগ্রাম মহানগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব জানায়, রেজাউল করিমের সঙ্গে অসংখ্য নারীর প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য তাদের দুজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে স্ত্রী জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীককে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। আসামিকে গ্রেপ্তারের পর উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় পরিহিত রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং ভুক্তভোগীর ব্যবহৃত মোবাইল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার রেজা হত্যার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রেজা জানান ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তারপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০২০ সালের অক্টোবর তারা বিয়ে করেন। পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করায় তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে সময় কাটান। ভুক্তভোগীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালীন একাধিক নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন সময়ে কাউন্সেলিং বা আলাপচারিতার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এই নিয়ে তাদের মাঝে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হয়।
তিনি আরও বলেন, রেজাউল জান্নাতুলকে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। রেজাউল গত ১০ আগস্ট নিহতের জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে পান্থপথের ‘ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট’ আবাসিক হোটেল নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা কাটাকাটি, বাগবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এসময় আসামি রেজাউল তার ব্যাগ থেকে ধারালো ছুরি বের করে জান্নাতুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করেন। এক পর্যায়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, হোটেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে মালিবাগে তার বাসা ও পরে একটি হাসপাতালে গিয়ে তার নিজের হাতের ক্ষত স্থান সেলাই করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরবর্র্তীতে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে চট্টগ্রামে গিয়ে মুরাদপুরে আত্মগোপন করেন।
রেজাউল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করে। এমবিএ চলাকালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন।
র্যাব জানায়, গত ১০ আগস্ট রাতে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ফ্যামিলি সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নামে আবাসিক হোটেল থেকে একজন নারী চিকিৎসকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় ভুক্তভোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও জখমের চিহ্ন দেখা যায়। এ হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে রাজধানীর কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-১০।
কেএম/এসএন