সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের মূলহোতাসহ আটক ২
সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে আটক করেছে র্যাব-৩। রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) বীণা রানী দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- মো. জাবেদ হোসেন রকি ও তার অন্যতম সহযোগী মো. আবির ওরফে শুভ।
এ সময়ে তাদের কাছ থেকে একটি কম্পিউটার, ৫ টি পাসপোর্ট, ২০টি খালি স্ট্যাম্প, ১০টি প্রশিক্ষণ সনদ, ওমান কনস্যুলেটর ও দূতাবাসের ভুয়া সিল, একটি মুঠেফোন, এক বক্স ভিজিটিং কার্ড, শতাধিক ভুয়া ভিসার ফটোকপি, কোভিড-১৯-এর ৫০টি ভুয়া প্রতিবেদন এবং তিনটি চেকের পাতা জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, মতিঝিল এলাকায় একটি মানবপাচার ও প্রতারক চক্র মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানির প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও টিকেট সরবরাহ করে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক বেকার যুবক যুবতীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদেরকে সর্বস্বান্ত করছে বলে র্যাবের কার্যালয়ে অভিযোগ করেন কিছু ভুক্তভোগী। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা ওই ভুয়া ভিসা ও টিকেট বিমানবন্দরে দেখানোর পর ইমেগ্রেশন তাদের ভিসা ও টিকেট জাল হওয়ায় বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়।
বীণা রানী দাস বলেন, অভিযোগ পেয়ে র্যাব-৩ এর একটি দল বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর পল্টন এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে মো. জাবেদ হোসেন রকি এবং তার অন্যতম সহযোগী মো. আবির ওরফে শুভ নামের দুই মানবপাচার চক্রের মূলহোতাকে আটক করা হয়।
আটকদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, মো. জাবেদ হোসেন রকি এবং তার অন্যতম সহযোগী মো. আবির ওরফে শুভ সংঘবদ্ধ মানবপাচার ও প্রতারক চক্রের সদস্য। আটক জাবেদ হোসেন এই চক্রের মূলহোতা। আর অপর অভিযুক্ত আবির তার সহযোগী। আবিরের মা সেলিনা বেগম ওরফে রোকেয়াও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি ২০০৪ সাল থেকে ওমানে অবস্থান করছেন।
স্টাফ অফিসার বীণা রানী দাস আরো বলেন, রোকেয়া ওমানের একটি রিক্রুটিং এজেন্সিতে কর্মী হিসেবে কাজ করেন। আর আবির ২০১৮ সাল থেকে ওমানে অবস্থান করে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে চক্রটিকে সহযোগিতা করে আসছে। তাদের জনশক্তি রপ্তানির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তারা দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে অবৈধভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে লোক পাঠিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে এই চক্রটি জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠিয়েছে। তারা বিদেশ গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অন্যদিকে এই চক্র শতাধিক লোককে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি তিন থেকে চার লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে ভুয়া ভিসা এবং ভুয়া টিকেট সরবরাহ করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাব- জানায়, এই চক্রের মূলহোতা আটক মো. জাবেদ হোসেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেন। তার দুটি মেয়ে এবং একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। জাবেদের বাবা দীর্ঘদিন দুবাই বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তার মতিঝিল এলাকায় একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে। ২০১২ সালে জাবেদ হোটেলের ওয়েটার ভিসায় দুবাই গিয়ে সেখানে চার বছর অবস্থান করে। দেশে ফেরার পর ২০১৮ সাল থেকে জাবেদ প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেয়। তার ট্রাভেল এজেন্সির কোনো লাইসেন্স নেই। কিন্তু তিনি জাবেদ ট্রাভেল এজেন্সি নামে তার অফিস পরিচালনা করে আসছে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য প্রথমে সে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে নারী কর্মীদের মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে পাঠায়।
বীণা রানী দাস বলেন, গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জনের পর জাবেদ পুরুষ কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট ও টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণামূলকভাবে জনপ্রতি তিন থেকে চার লাখ করে টাকা হাতিয়ে নেন। তারপর তিনি তার অফিসের কম্পিউটার ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের ভুয়া ভিসা তৈরি করে। ওই ভিসায় উদ্ধারকৃত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের নকল সিল ব্যবহার করে ভুয়া ভিসাটি আসল হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করে। অতপর ভুয়া ভিসা, নকল টিকেট ও নকল বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স ভুক্তভোগীদের সরবরাহ করে। ভুক্তভোগীরা ওই ভিসা এবং টিকেট নিয়ে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন তাদের বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী তার কাছে আবারও নতুন ভিসা ইস্যু করার জন্য সময় প্রার্থনা করে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আবারও নতুন ভিসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। অন্যদিকে ভুক্তভোগীদের মধ্যে কেউ টাকা ফেরত চাইলে তিনি তাদের ব্যাংক চেক দেন। কিন্তু ওই চেক নগদ করতে গেলে ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। আর এই চক্রের অন্যতম সহযোগী মো. আবির সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি ২০১৮ সালে বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ওমান যায়। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে আসার পর তিনি তার খালাত ভাই জাবেদের সঙ্গে প্রতারণা এবং মানবপাচারকে তার পেশা হিসেবে বেছে নেন।
আটককৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস