চলন্ত বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ, মূল পরিকল্পনাকারীসহ গ্রেপ্তার ১০
বহুল আলোচিত টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ জন সদস্যকে ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রবিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১২ ও র্যাব-১৪ তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেটকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে র্যাব।
র্যাব বলছে, টাঙ্গাইলে মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন। মাত্র ২১ বছর বয়সী রতন পেশায় বাসচালকের সহকারী (হেলপার)। দিনে বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও রাতের আড়ালেই ছিল রতনের ভিন্ন রূপ। রাতে বিভিন্ন বাসে ডাকাতি করতেন রতন। এর আগেও ১০টি বাসে ডাকাতির নেতৃত্ব দেন তিনি। গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগও করেছেন।
সাভারে রোড ব্লক করে একটি বাস ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রতন। প্রায় দেড় বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে আবারও ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়েন। সবশেষ টাঙ্গাইলে মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় রতনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন ১৩ জন। তাদের কেউ বাসের হেলপার কেউবা পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী রতনসহ ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা থাকলেও ধর্ষণের কোনো পরিকল্পনা আগে থেকে ছিল না ডাকাতদের।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ডাকাত চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেন (২১), মো. আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)।
এ অভিযানে তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল সেট, রুপার চুড়ি ২টি, ১৪টি সিম কার্ড ও ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, রতন মিয়া উক্ত বাস ডাকাতির ৩ দিন পূর্বে তার সহযোগী ডাকাত রাজা মিয়াকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিলে রাজা মিয়া দলের অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলে। পরবর্তীকালে গ্রেপ্তারকৃত রতন, মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানায় এবং ডাকাত মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেয়। ওই ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন ডাকাত অংশ নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রতনের নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট ২০২২ তারিখ, দুপুরবেলা গাজীপুরের জিরানী বাজার এলকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। মূল পরিকল্পনাকারী রতন ওই ডাকাতি কাজে যাবতীয় প্রস্তুতির আর্থিক খরচাদি বহন করে। এ চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ডাকাত ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর সংগ্রহ করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আমরা জানতে পারি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির রাতে ডাকাত রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেয় এবং যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে। পরবর্তীকালে আরও দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে আরোহন করে। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাসের পিছনের দিকে বসে। বাসটি যখন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করছে তখন গ্রেপ্তারকৃত রতন ডাকাত দলের সদস্যদের চাকু ও ধারালো কাঁচি দেয়। আউয়াল ডাকাত ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা প্রদান করলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং ডাকাত রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের হাত মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখে মুখোশ পড়িয়ে মুখমন্ডল ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সঙ্গে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, পরে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় গ্রেপ্তারকৃত রতন গাড়ি চালনার সময় লুটকৃত মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার কারণে রতন পিছনে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও বালুর সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপাশে হেলে পড়ে। তৎক্ষনাৎ ডাকাতদলের সবাই লুটকৃত মালামালসহ বাস থেকে নেমে পলিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি সারাদেশে বেশ আলোচনা সৃষ্টি করে এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে বিশেষ বিশেষ অভিযানে এসব ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/টিটি