ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার জেরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা

২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে এক নারী খুন হন। এ হত্যাকাণ্ডে মূল আসামি করা হয় নিহতের স্বামী জাকির হোসেনকে (৪৭)। এই মামলায় গ্রেপ্তারের পর ২০১০ সালে জামিন পান জাকির। স্ত্রী-সন্তান হত্যার এ মামলার বিচারে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয় জাকিরের। গ্রেপ্তার এড়াতে প্রতিনিয়ত করেছেন পেশার পরিবর্তন। কখনো গার্মেন্টস, স্পাইরাল বাইন্ডিং, ঝুট ব্যবসা করেছেন। আবার কখনো বাউলের ছদ্মবেশে করেছেন জীবিকা নির্বাহ। দীর্ঘ এক যুগ পলাতক থাকার পর অবশেষে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।
র্যাব জানায়, স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি ও ভাবির সঙ্গে পরকীয়ার জেরে পারিবারিক কলহে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন জাকির হোসেন। স্ত্রী-সন্তান হত্যায় পাঁচ বছর জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান জাকির। তিনি ভেবেছিলেন আর কখনও আইনের লোকের হাতে ধরা পড়বেন না। বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) রাতে সাভারের শাহীবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঘটনার পর ২০১৩ সালে জাকির হোসেন আবারও বিয়ে করে সাভার জিনজিরা এলাকায় বসবাস করে আসছিলেন। এ সংসারে তার দুইজন কন্যা সন্তান রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি চট্টগ্রাম, ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল, হাজারীবাগ, খিলগাঁও ও সাভার এলাকায় থাকতেন।
তিনি বলেন, ২০০০ সালে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার জিয়নপুরের একই গ্রামের আবু হানিফের মেয়ে নিপা আক্তারকে বিয়ে করেন জাকির। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ অর্থ, গয়না এবং আসবাবপত্র দেওয়া হয়। তবে বিয়ের পর আরও যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী নিপাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন জাকির। এরমধ্যে জাকির-নিপা দম্পতির ঘরে জ্যোতি নামে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। মেয়ের বয়স যখন তিন বছর তখন পুনরায় গর্ভধারণ করেন স্ত্রী নিপা আক্তার। সেসময় নিপা জানতে পারেন জাকিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ও তার স্বামী পরকীয়ায় লিপ্ত। বিষয়টি জাহাঙ্গীরকে জানিয়ে দেন নিপা। এনিয়ে মনোমালিন্য ও কলহ চরমে ওঠে। জাকির নিপাকে তালাকের ভয় দেখানো শুরু করেন। পারিবারিক সম্মানহানি ও প্রতিশোধের মানসিকতা থেকে নিপাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন জাকির।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ২০০৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিপা আক্তারকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জাকির। শিশুকন্যা জ্যোতি ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহতের বাবা আবু হানিফ বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় জাকির হোসেন, তার বাবা-নইম উদ্দিন শেখ, মা-মালেকা বানু এবং ভাবি-তাহমিনাকে আসামি করা হয়। ওই মামলার এক নম্বর আসামি জাকির ৫ বছর কারাভোগ শেষে জামিনে বেরিয়ে ২০১০ সালে আত্মগোপনে চলে যান।
জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এএস
