প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যা: পুনঃ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন করে সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার পরিবার।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ারের পরিবারের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে নিহত প্রকৌশলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার বলেন, ২০২০ সালের ১১ মে তারিখ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার একদিন পর আমরা তার হত্যাকান্ডের খবর জানতে পারি। পরবর্তীতে এই ঘটনা পুরো দেশে আলোচনার সৃষ্টি করে। সিটি কর্পোরেশনের একটি প্রভাবশালি গোষ্ঠির অপকর্মে সায় না দেয়ায় তাকে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনার আমরা পুনরায় তদন্ত চাই আগের তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতির কারণে আমরা ন্যায্য বিচার পাইনি তাছাড়া এই মামলা যারা আসামি ছিল অনেকে জামিনে রয়েছে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলীর স্ত্রী খাদিজা আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগ দিয়েছে। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে প্রকৌশলী দেলোয়ারের সহকর্মী সেলিম, গাড়ি চালকসহ তিন জনকে আসামী করা হয়েছে। যারা গ্রেপ্তার পরবর্তী স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ি তারা ছাড়া অন্য কেউ জড়িত নন। তবে পুলিশ অভিযোগ জমা দিলেও রহস্যজনকভাবে আমাদেরকে জানায়নি। পরবর্তীতে আমরা আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। ওই চার্জশীট সুষ্ঠু হয়নি এবং তদন্ত ও সুষ্ঠু হয়নি।
পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রকৌশলী হত্যাকাণ্ডের পর পরই আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করেছিলাম। যেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তি হত্যকান্ড নিয়ে মুখ খুলতে হুমকি দিচ্ছিলেন। কিন্তু পারিপার্শ্বিক ভয়ভীতি এবং হুমকির কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে কোনোদিন কথা বলতে পারিনি। এমনকি একটি বেসরকারি টেলিভিশন এ নিয়ে বারবার হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলেও আমরা জীবনের ভয়ে কোনো কথা বলিনি। জিডির বিষয়টি পুলিশ একবারের জন্যও আমলে নেয়নি এবং তদন্ত করেনি। এমনকি পুলিশ প্রধান (আইজপি) বরাবর অন্য আরেকটি নিরপেক্ষ তদন্ত সংস্থা দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য আবেদন করলেও সেটির কোনো ফলাফল পাইনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই সময় নতুন সিটি কর্পোরেশন হিসাবে গাজীপুরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান ছিল। সেই উন্নয়মমূলক কর্মকাণ্ড ঠিকাদারদের মধ্যে বণ্টনের নেপথ্যে মূল ভূমিকায় ছিলেন তৎকালিন মেয়রের ঘনিষ্টজন মনির হোসেন নামে একজন। স্থানীয়দের অনেকের কাছে তিনি লম্বা মনির, আবার কারো কাছে লাদেন মনির নামেও পরিচিত। তিনি মেয়রের পাশে আলাদা রুম নিয়ে বসতেন। তার অনুমতি ছাড়া কেউ মেয়রের কাছে প্রবেশ করতে পারতেন না।
খাদিজা আক্তার বলেন, ওই মনির হোসেন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে নানা সময় অনৈতিক কাজ করতে চাপ দিতেন বলে আমার স্বামী জানান। এমনকি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুর আগে অফিসিয়ালি চাপের মুখে ছিলেন। কিন্তু চাপা স্বভাবের হওয়ায় কি চাপ সেটি বলেননি।
তিনি বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের পেছনে শক্তিশালি কেউ জড়িত আছে। সেই ধারণা আরো দৃঢ় হয়েছে-পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর। পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়ার আগে বাদিকে একবারের জন্যও জানানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি। এছাড়া প্রতিবেদনে যেভাবে হত্যার কথা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আমাদের ধারণা, ঘটনার সত্যতা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নাটকীয়তায় ভরা একটি গল্প সাজানো হয়েছে। বরং দু'জনের পক্ষে যেভাবে হত্যার কথা বলা হয়েছে- সেটি অসম্ভব বলে মনে করছি। আমরা মনে করছি, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেমন রাঘববোয়াল জড়িত, তেমনিভাবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও আরো কেউ জড়িত রয়েছেন। যেটি সঠিক এবং নিরপেক্ষ তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, এ হত্যকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়িটিও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যকাণ্ডটি নিরপেক্ষ তদন্ত হয়েছে বলে মনে করছি না। বরং ব্যাপক পক্ষপাত দোষে দুষ্ট এই দুর্বল তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি এবং পুনরায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি।
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য যে, গত ৮ জুলাই আলোচিত মামলাটির এক নম্বর আসামী সেলিম জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছেন। জামিনে বেরিয়ে তিনি বিভিন্ন লোক মারফত আমাকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে এই মামলার এডভোকেট এম কাওসার আহমেদ বলেন, এই মামলাটি নিয়ে অনেক নাটকের ঘটনা ঘটিয়েছে আমি এই মামলাটি নেওয়ার পর আমার কাছে মনে হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক বিচার হচ্ছে না এজন্য আমি পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বড় ছেলে হিমেল (২২) ও ছোট ছেলে তমাল (১০)।
কেএম/এএস