অপহরণের তিন মাস পর শিশু উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২
সাভারের আশুলিয়ায় অপহরণের তিন মাস পর দেড় বছরের শিশুকে উদ্ধার ও দুই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। সোমবার (৩০ মে) রংপুর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে, গাজীপুরের একটি বাসা থেকে রোকসানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (৩১ মে) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
র্যাব জানায়, আশুলিয়ায় চাঞ্চল্যকর ৩ বছর ৬ মাসের শিশু আফিয়াকে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুরের দুর্গম চরাঞ্চল থেকে উদ্ধার এবং আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর ৬ বছরের শিশু আলী হোসেন অপহরণের ৬ দিন পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে উদ্ধার ও দুজন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তারসহ অসংখ্য অপহৃত শিশু এবং মানব ভিকটিমকে উদ্ধারে সফল অভিযান পরিচালনা করে আসছে র্যাব-৪।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আশুলিয়ার শিমুলিয়ার টেঙ্গুরী এলাকা থেকে দেড় বছরের শিশু আঁখিকে এক অজ্ঞাত যুবক অপহরণ করে। শিশুটি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীর পাইক্কা গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে। সাদ্দাম হোসেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ও তার স্ত্রী মিরা আক্তার পোশাকশ্রমিক। তারা আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের টেঙ্গুরী এলাকায় আলী হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। এজাহার মতে, অপহরণকারী অজ্ঞাত সেই যুবক ঘটনার কয়েকদিন আগে আলী হোসেনের বাড়িতে বাসা ভাড়া নিতে আসে। তখন বাড়ির ম্যানেজার নেই বলে তিনি কথাবার্তা বলে চলে যায়। অপহরণকারী পুনরায় ঘটনার দিন বাসা ভাড়া নিতে আসে। সেসময় গেটের বাইরে খোলা জায়গায় মিরা ও সাদ্দাম দম্পতির সন্তান আঁখি এবং মিরাজ খেলাধুলা করছিল। অপহরণকারী কথাবার্তার একপর্যায়ে ভুক্তভোগী আঁখির ভাই মিরাজকে কিছু টাকা দিয়ে কৌশলে দোকানে চকোলেট কেনার জন্য পাঠায়। সেই সুযোগে অজ্ঞাতনামা যুবক দোকানের আড়ালে থাকা আঁখিকে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ঘটনার পরদিন গত ১ এপ্রিল শিশুর দাদা বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি শিশু অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর র্যাব-৪ অপহৃত শিশুটিকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় যে, অপহরণকারী রংপুর জেলায় আত্মগোপনে রয়েছে। পরে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল র্যাব-১৩ এর সহযোগিতায় সোমবার রংপুর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যমতে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুরের একটি বাসা হতে রোকসানার হেফাজত থেকে দেড় বছরের অপহৃত শিশু আঁখিকে উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৪ এর দেওয়া তথ্য মতে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অপহরণকারী মো. রাশেদুল ইসলাম গত ২ বছর ধরে আশুলিয়ার জিরানী বাজার কলেজ রোড এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী এবং বিবাহিত। অপহরণকারীর স্ত্রী নুরজাহান ও অপহৃত শিশুর মা মিরা আক্তার আশুলিয়ায় একই গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। যার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে অপহরণকারীর স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে তাদের ৭ বছরের সন্তানকে রেখে প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। মাতৃহারা ৭ বছরের শিশুকে নিয়ে আসামি রাশেদ বিপদে পড়ে যায়।
মোজাম্মেল হক বলেন, রাশেদের স্ত্রী কার সঙ্গে পালিয়ে গেছে এবং কোথায় আছে বিষয়টি অপহৃত শিশু আঁখির মা মিরা আক্তার জানেন বলে অপহরণকারী রাশেদের সন্দেহ হয়। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বেশ কয়েকদিন মিরা আক্তারের কাছে স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানা জানতে চান রাশেদ। কিন্তু মিরা আক্তার জানায়, রাশেদের স্ত্রীর বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। আসামির বক্তব্য অনুযায়ী তার দৃঢ় বিশ্বাস মিরা আক্তার তার স্ত্রীর অবস্থান সম্পর্কে জানে কিন্তু ইচ্ছে করে বলছেন না। আসামি রাশেদ তার স্ত্রীর সঠিক অবস্থান জানার উদ্দেশে সাদ্দাম ও মিরা দম্পতির শিশুকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক সাদ্দাম ও মিরা দম্পতি কাজে চলে যাওয়ার পর গত ৩১ মার্চ অপহরণকারী বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে অপহৃত শিশু আঁখির নানিকে বাসা ভাড়ার বিষয়ে কথা বলার একপর্যায়ে কৌশলে শিশুর বড় ভাই মিরাজকে কিছু টাকা দিয়ে চকলেট খাওয়ার দোকানে পাঠিয়ে সুযোগ বুঝে শিশু আঁখিকে কোলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
র্যাব কর্মকর্তা ডিআইজি মোজাম্মেল বলেন, অপহৃত শিশুর অবস্থান জানার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক তৎপরতা চালাতে থাকে। কিন্তু আসামি অজ্ঞাত হওয়ায় শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ ঘটনার এক সপ্তাহ পরে অপহরণকারী রাশেদ শিশুর বাবা-মাকে ফোন করে জানায়, শিশুটি তার হেফাজতে আছে এবং তার স্ত্রীর সঠিক ঠিকানা জানালে শিশুকে ফেরত দেওয়া হবে। প্রকৃতপক্ষে অপহৃত শিশুর বাবা-মা অপহরণকারীর স্ত্রীর ঠিকানা জানতেন না বলেই সঠিক ঠিকানা দিতে পারেনি। অপহরণকারী একপর্যায়ে লোভের বশবর্তী হয়ে অপহৃত আঁখির বাবা-মার কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং অপহরণকারীর বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার অবস্থান জেনে যাবে সেই ভয়ে আসামি রাশেদ টাকা না তুলে মোবাইল বন্ধ করে দেয় এবং গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত মোবাইল ব্যবহার করেননি।
র্যাব জানায়, আসামি রাশেদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘটনার দিনই অপহৃত শিশু আঁখিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর এলাকায় তার ফুপু রোকসানার কাছে কিছুদিন রাখার অনুরোধ করে নিজ গ্রামের বাড়ি রংপুরে গিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় রাশেদ। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত শিশু আঁখি আসামি রাশেদের ফুপু রোকসানার হেফাজতে ছিল।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/এসজি/