মাদক দিয়ে কেক-চকলেট-মিল্কশেক তৈরি করার চক্র গ্রেপ্তার

ইউটিউবে কানাডা ও আফ্রিকার মাদক ব্যবসায়ীদের করা ভিডিও দেখে গাঁজার নির্যাস দিয়ে মিল্কশেক, কেক ও চকলেট বানানো শেখেন জুবায়ের হোসেন (২৪)। ভিডিও দেখে উত্তরায় নিজের ভাড়া বাসায় আরও দুই সহযোগীকে নিয়ে গাঁজার নির্যাস থেকে এসব মাদকদ্রব্য তৈরি করতেন তিনি। পুলিশ জানায়, তারা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে কানাডিয়ান ও আফ্রিকান মাদক কারবারিদের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গাঁজা দিয়ে কেক, চকলেট ও মিল্কশেক তৈরি করে আসছিল। এক কেজি গাঁজার চকলেট তৈরিতে পাঁচ কেজি গাঁজার নির্যাস প্রয়োজন হয় বলেও জানান তারা।
অনলাইনে মাধ্যমে অর্ডার পৌঁছে দেওয়াও হতো ক্রেতার ঠিকানায়। রাজধানীতে এমনই চক্রের এক তরুণীসহ তিন জনকে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। আটকরা হলেন- রাজধানীর দক্ষিণখান মিয়া পাড়ার জুবায়ের হোসেন (২৪), উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের অনুভব খান রিবু (২৩) ও উত্তরার সি ব্লকের দুই নম্বরে রোডের বাসিন্দা নাফিজা নাজা (২২)।
রবিবার (২৯ মে) বিকেল ৪টার দিকে প্রথমে গুলশানের ৬ নম্বর রোড থেকে মোটরসাইকেলযোগে ডেলিভারিম্যান এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরা থেকে চক্রের অন্য এক তরুণী ও এক যুবককে আটক করা হয়। সোমবার (৩০ মে) দুপুরে গুলশান থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের বাসা থেকে গাঁজার নির্যাস দিয়ে তৈরি ৫টি চকলেটের বার যার প্রতিটির ওজন ১ কেজি করে, ২টি মিল্কশেকের বোতল যার প্রতিটির ওজন ৫০০ গ্রাম করে, ফুয়েল পেপারে মোড়ানো গাঁজার তৈরি ছোট ছোট ৫০টি চকলেট, গাঁজা দিয়ে তৈরি ২টি চ্যাপ্টা চকলেটের বার, গাঁজা দিয়ে তৈরি দুই পিস কেক, ৪টি চকলেট তৈরির ডায়েস, ৪টি স্টিকার রোল, ৪টি অ্যাঙ্কর জেলটিন, ৭টি বানানো ফ্লেবার জুস, ৭টি খালি প্লাস্টিকের জুস পট, ১০৭টি প্লাস্টিকের গ্লাস, ১ কেজি গাঁজা, ১টি এইচপি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, দুইটি আইফোন জব্দ করা হয়েছে। ডিসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গোপন খবরে গুলশান থানা পুলিশের বিশেষ আভিযানিক দল ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শেখ শাহানুর রহমানের নেতৃত্বে ওই এলাকায় অবস্থান নেয়। এসময় একটি মোটরসাইকেলের পেছনে বসা যুবককে (জুবায়ের) গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুবায়ের শিকার করে বলেছে, ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মাদক দিয়ে তৈরি এসব খাবার সরবরাহ করা হচ্ছিল। পরে তার দেওয়া তথ্যে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর রোডের আট নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে গাঁজাসহ গাঁজার নির্যাস দিয়ে বানানো বিভিন্ন খাবার উপকরণ জব্দ এবং চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। আটকরা জানিয়েছেন, তারা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে কানাডিয়ান ও আফ্রিকান মাদক কারবারিদের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গাঁজা দিয়ে কেক, চকলেট ও মিল্কশেক তৈরি করে আসছিল। এক কেজি গাঁজার চকলেট তৈরিতে পাঁচ কেজি গাঁজার নির্যাস প্রয়োজন হয় বলেও জানান তারা।
তিনি বলেন, জুবায়ের রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১২ নম্বর সেক্টরের ১৪ নম্বর রোডের একটি ৬ তলা ভবনের বি-৫ ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। ইউটিউবে কানাডিয়ান-আফ্রিকান মাদক ব্যবসায়ীদের তৈরি বিভিন্ন ভিডিও দেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গাঁজা দিয়ে কেক, চকলেট, মিল্কশেক তৈরি করা শেখেন। পরে তার সহযোগীদের নিয়ে উত্তরার বাসায় এসব পণ্য বানাতেন তিনি। পরে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে এসব মাদকদ্রব্য তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হোম ডেলিভারি দিতেন। আটকদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান গুলশান বিভাগের ডিসি মো. আসাদুজ্জামান।
কেএম/এএজেড
