নতুন বিয়ে করে যৌতুক আদায়
শ্বাসরোধে গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শ্বাসরোধে গৃহবধূকে হত্যার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তারকৃত আসামি হলেন শফিকুল ইসলাম (৩২)। সোমবার ৩০ মে) রাতে সিএমপি’র আকবরশাহ থানাধীন এলাকা হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডি জানায়, যৌতুকের দাবিতে মারপিট করার অভ্যাস ছিল শফিকুলের। তাকে গ্রেপ্তারের পর সিআইডি বলছে, আসামি শরিফুল ইসলাম এর ব্যবসা হলো নতুন নতুন বিয়ে করে যৌতুক নেওয়া। তার আগের কয়েকটা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিআইডি জানায়, ১৫ মে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন চরদাহ সাকিনস্থ জনৈক ছবিলা রহমানের ভাড়া করা বাসার তালাবদ্ধ ঘরে রোজিনা বেগম (৩৩) লাশ পাওয়ার ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় একটি মামলা হয় এর পর মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে। এবং এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় সিআইডি। আজ সোমবার (৩০ মে) সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
মুক্তা ধর বলেন, এ ঘটনায় বিভিন্ন উৎস হতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে মো: শফিকুলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এরপর এলআইসি'র একটি টীম অভিযান পরিচালনা করে শফিকুলকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়।
সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত আসামী স্বীকার করে যে, এ পর্যন্ত সে ৪ টি বিয়ে করেছে। প্রথম বিয়ে ২০০৯ সালে তার নিজ এলাকার কোহিনুর খাতুন (১৮) কে। উক্ত সংসার মাত্র ২ মাস স্থায়ী হয়। দ্বিতীয় বিয়ে ২০১১ সালে একই থানাধীন ফুলবাড়ী এলাকার শাহিদা খাতুন (২১) কে। উক্ত সংসারের স্থায়ীত্ব ছিল ১ বছর ২ মাস। তাদের দাম্পত্য জীবনে জান্নাতি (৯) নামে একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে। তৃতীয় বিয়ে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক এলাকায় ড্রাইভিং পেশায় নিয়োজিত থাকা কালে রাশেদা বেগম (৩১) কে । তাদের দাম্পত্য জীবনে খাদিজা আক্তার সুমাইয়া (৭) নামে একটি কন্যা সন্তান জন্মলাভ করে। ওই সংসার থাকা অবস্থায় ২০২০ সালে চতুর্থ বিয়ে করে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন বর্তমান ভিক্টিম রোজিনাকে।
সিআইডির তথ্য মতে জানা যায়, প্রায় ১ বছর ৬ মাস পূর্বে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতে শফিকুল কালিগঞ্জ থানা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ভ্যান চালানোর কাজ করতো। বিয়ের পর হতেই যৌতুকের দাবিতে সে তার স্ত্রী- রোজিনাকে প্রায়শই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল। গত ১৪ মে ভিক্টিমকে যৌতুকের দাবিতে মারপিট করার সংবাদ পেয়ে তার বাবার বাড়ীর লোকজন ঘটনাস্থলে যেয়ে বিস্তারিত জেনে স্বামী- শফিকুল কর্তৃক দাবিকৃত যৌতুকের ১,০০,০০০/= (এক লক্ষ) টাকা দিতে রাজি হয়। কিন্তু একই তারিখ রাতে আসামি- শফিকুল ইসলাম রোজিনার সঙ্গে পুনরায় কথা কাটাকাটি হলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রোজিনাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘটনাস্থল হতে দ্রুত পালিয়ে যায়।
শফিকুল ইতোপূর্বে তার সকল স্ত্রীকেই যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে তাদের পরিবারের নিকট হতে বিভিন্ন অংকের যৌতুক আদায় করেছে বলেও তথ্য পেয়েছে সিআইডি। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কেএম/এএজেড
