বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে উধাও ২ কনস্টেবলকে খুঁজছে পুলিশ
প্রশিক্ষণ নিতে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে উধাও হওয়া দুই পুলিশ কনস্টেবলকে খুঁজছে বাংলাদেশ পুলিশ। নিখোঁজ ওই দুই কনস্টেবলের নাম মো. শাহ আলম ও রাসেল চন্দ্র দে। তারা দুজনেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে তারা নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন।
পুলিশ সদর দপ্তর ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে গত মঙ্গলবার (২৪ মে) দেশে ফিরেছেন প্রশিক্ষণ দলের ছয়জন সদস্য বাকি দুজন ফিরে আসেননি।
এদিকে ফিরে আসা ছয়জন পুলিশ সদস্য বলেছেন, দুজন কনস্টেবল দেশে আসার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তারা একদিন আগে হোটেল ছেড়েছে এবং ফিরে আসার দিনও তাদের কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিতে ডগ স্কোয়াড গঠনের জন্য গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রস্তাব পাঠায় চট্টগ্রাম নগর পুলিশ। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, নগর পুলিশে দুটি ভিন্ন প্রজাতির ২০টি প্রশিক্ষিত কুকুর যোগ হবে। এর মধ্যে ৮টি জার্মান শেফার্ড ও ১২টি ল্যাব্রাডার।
একটি তথ্য বলছে, কুকুর সরবরাহ ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পায় মেসার্স রিফা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী ‘ম্যানেজমেন্ট, হ্যান্ডলিং অ্যান্ড ট্রেইনিং অব ডগ’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পুলিশের প্রতিনিধিদলটি নেদারল্যান্ডসে যায়।
তথ্য মতে জানা গেছে, নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে ওই দলে ছিলেন একজন উপপরিদর্শক (এসআই-সশস্ত্র), একজন নায়েক ও পাঁচজন কনস্টেবল। দুজন নিখোঁজের বিষয়ে বেলায়েত হোসেন কিছু বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়া ওই দুই পুলিশ সদস্য হয়তো সেখানে নিজের ইচ্ছায় থেকে গেছেন। ওই সূত্রটি নিশ্চিত করে জানায়, এই বিষয়ে ফিরে আসা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, কনস্টেবল মো. শাহ আলম ও রাসেল চন্দ্র দে হয়তো নিজের ইচ্ছাই ওই দেশে থেকে গেছেন।
এ ছাড়া এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের আরেকটি সূত্র ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ বলছে, এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য জানার চেষ্টা চলছে। তাদের কোনো বিপদ হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে তারা বিদেশে রয়ে গেছেন, সেটার তদন্ত চলছে। তদন্তের পরে এ ঘটনার আসল তথ্য জানা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) কামরুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা নিখোঁজ ওই দুই কনস্টেবলকে খুঁজছি। আমরা প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘কনস্টেবল শাহ আলম ও রাসেল চন্দ্র দে এর কোনো বিপদ হয়েছে নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁরা বিদেশে থেকে গেছেন, সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিছু তথ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রকৃত ঘটনা জানার পর এ বিষয়ে পবিস্তারিত পরে জানানো হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, আমরা ফিরে আসা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। ফিরতি ফ্লাইটের আগের দিন দুই কনস্টেবল হোটেল থেকে বের হন। এরপর তাদের অন্য সদস্যরা অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তারা দেশে চলে আসেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা পুলিশ সদর দপ্তরকে কিছু তথ্য প্রেরণ করেছি সে গুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নিখোঁজ হওয়া ওই দুই কনস্টেবল নগর পুলিশের ডগ স্কোয়াড পরিচালনার দক্ষতা অর্জনে ৯ মে নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। এরপর তারা আর ফিরে আসেনি।
তারা যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে সেখানে থেকে যায় তাহলে আপনারা কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। দূতাবাসের মাধ্যমে প্রতিবেদন পাওয়ার পর সংস্থার পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেএম/এমএমএ/