নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: আসামি সজীব-বাপ্পির কক্সবাজারে চাকরির চেষ্টা

ইফতারের সময় ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি ফাস্টফুডের দোকানের টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা। এর জেরে দোকানের কর্মচারী মোয়াজ্জেম হোসেন সজীব (২৩) ও মেহেদী হাসান বাপ্পির (২১) মধ্যে ক্ষোভ জন্মায়। নিজেদের প্রভাব বোঝাতে গিয়েই পূর্বপরিচিত ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ডেকে আনেন তারা। এর মাধ্যমে নিউমার্কেটে সংঘর্ষের সূত্রপাত।
সজীব ও বাপ্পির মাধ্যমে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরেই আত্মগোপনে ছিলেন। পরিচয় লুকাতে নিজেদের বেশভূষা পাল্টে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে চাকরির চেষ্টা করছিলেন তারা।
অবশেষে বুধবার (৪ মে) দিবাগত রাতে কক্সবাজার থেকে বাপ্পি ও সজীবকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)। যারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সহিংসতায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৫ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত ১৮ এপ্রিল রাত থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৮ ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ দুই শতাধিক আহত হন। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলাসহ মোট পাচঁটি মামলা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ১৮ এপ্রিল বিকেলে ক্যাপিটাল ও ওয়েলকাম নামে দুটি ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ইফতার বিক্রির টেবিল বসানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে দোকানের কর্মচারী সজীব ও বাপ্পি ফোন করে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতকারীকে আসতে বলে।
রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে ১০-১৫ জন দুষ্কৃতকারী এসে ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকান কর্মচারীদের মারধর করে। এ সময় অন্যান্য দোকানের কর্মচারীরা আক্রমণ প্রতিহতের চেষ্টা চালায়। দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধলে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হয়।
পরে মারামারিকে কেন্দ্র করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে গুজব ছড়িয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য ও কনটেন্ট ছড়িয়ে ইন্ধন দেওয়ার ফলে চরম সহিংসতায় রূপ নেয়। সংঘর্ষে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মোরসালিন নিহত হন।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘর্ষের সূত্রপাতকারী সজীব ও বাপ্পিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বাপ্পি ওয়েলকাম ফাস্টফুডে দুই বছর ধরে কাজ করতেন। বাপ্পি ও সজীব বিভিন্ন সময় নিজেদের হিরোইজম প্রকাশের জন্য সেখানে গ্রুপিং করতেন। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা প্রায়ই মার্কেটে আসতো এবং তাদের দোকানে আড্ডা দিত। সেই সূত্রে তাদের সঙ্গে বাপ্পি ও সজীবের সখ্য ছিল।
ঘটনার পর বাপ্পী ও সজীব কক্সবাজারে আত্মগোপনে যান। নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য তার লম্বা চুল কেটে ছোট করে এবং কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে চাকরির চেষ্টা চালায়।
মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
কেএম/আরএ/
