ছিনতাই করা মোবাইলের মূল ক্রেতা অপরাধীরা
ছোঁ মেরে পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যেত ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। সেগুলো বিক্রি করত রাজধানীর ভাসমান মার্কেটেগুলোতে। বিক্রির আগে মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে ফেলা হতো যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর খোঁজ না পায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইলগুলোর মূল ক্রেতা অপরাধীরা। অপরাধীরা এসব মোবাইল কিনে বিভিন্ন অপরাধ্মূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে
পড়ছে।
সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে র্যাব-৩ এর ৭টি আভিযানিক দল রাজধানীর লালবাগ, সিদ্ধিরগঞ্জ, পল্টন, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, মতিঝিল, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, ওয়ারিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চুরি-ছিনতাই, মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের মূলহোতাসহ এসব চক্রের ৩১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. আল মামুন (২৮), মো. রাকিব (২৭), মো. জাহাঙ্গীর (৬৬), মো. ইকবাল (৫০), মো. মোখলেছুর রহমান (৩৮), মো. বিল্লাল মিয়া (৪০), মো. বিল্লাল (২৭), মো. রাকিব (২৩), মো. মাইনু (২১), মো. জনি (২০), মো. স্বপন (৫০), মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ (৩৫), মো. মোশারফ (৪৫), মেহেদী হাসান রাজু (২৪), মো. জুয়েল (৪০), মো. জুম্মুন (২৮), মো. রকিবুল ইসলাম (৩১), মো. নজরুল (৩০), মো. পারভেজ (৩৮), মো. ইউসুফ বেপারী (৪২), মো. ইউসুফ দেওয়ান (৩৫), মো. রুবেল মোল্লা (৩১), মো. রুবেল দেওয়ান (৩০), মো. জাফর (৪৮), মো. নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টু (৩১), মো. আনছার ঢালী ওরফে ডালিম হোসেন (৫২), মো. হালিম সরদার (৫২), মো. শাহীন শেখ (৩১), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. সবুজ (২৮) ও মো. আবুল হোসেন (৬১)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর পরিবর্তন করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদিসহ এক হাজারের বেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি-বিদেশি মোবাইল ফোন, ট্যাব ও ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, অভিযানে গুলিস্তান এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা রাকিব, পল্টন এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা বিল্লাল হোসেন, রমনা এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা পারভেজ, শাহবাগ এলাকার চোরাকারবারী চক্রের মূলহোতা নাছির উদ্দিন ওরফে পিন্টু, মতিঝিল এলাকার চোরাকারবারি চক্রের মূলহোতা মো. ইউসুফ বেপারীসহ তাদের সহযোগীসহ মোট ৩১ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা মূলত ছিনতাই ও চোরাইকৃত মোবাইল ফোন অল্পদামে কিনে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করত।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, র্যাব-৩ এর আওতাধীন এলাকায় অন্তত ২০টির বেশি মুঠোফোন ছিনতাইকারী চক্র রয়েছে। চুরি এবং ছিনতাই হওয়া মোবাইলগুলোর আইএমইআই নম্বর পরিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্রের যোগসাজশে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গোপনে বিক্রি করত তারা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল ছিনতাই, চোরাই মুঠোফোন কেনাবেচায় জড়িত সিন্ডিকেট, দেশে অবৈধভাবে আসা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামীদামি মোবাইল ফোনের জমজমাট বাণিজ্য, চোরাইকৃত মোবাইল ফোনের আইএমইআই পরিবর্তন করে নানা মাধ্যমে বিক্রির বিষয়টি দেশের শীর্ষ স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ বলেন, ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট থাকে পথচারীদের মোবাইল। এসব মোবাইল অল্পদামে চোরাই মোবাইল কারবারিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া এসব মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে স্বল্প আয়ের গ্রহকদের কাছে বিক্রি করা হয়। আইএমইআই পরিবর্তন করার কারণে এসব মোবাইল পরে উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ডাকাতি, ছিনতাই ও চোরাইমাল বিক্রি করা ও কাছে রাখা আমলযোগ্য অপরাধ। দীর্ঘদিন ধরে তারা নির্বিঘ্নে-নির্ভয়ে চোরাই মোবাইল বিক্রি ও আইএমইআই পরিবর্তনের অবৈধ ব্যবসা করছিল।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
কেএম/এমএমএ/