সেনাবাহিনীর সার্টিফিকেট ও ছবি দেখিয়ে প্রেম
অস্ত্র-গুলিসহ ভুয়া মেজর-ক্যাপ্টেন গ্রেপ্তার

ভুয়া সামরিক কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে অস্ত্র-গুলিসহ দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ইয়াসিন আরাফাত তুষার (২৮) ও মো. আল আমিন ওরফে হীরা (২৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি, দুটি ওয়াকিটকি সেট, সামরিক বাহিনীর ইউনিফর্ম, এক জোড়া বুট, দুই সেট র্যাংক ব্যাজ, দুটি পাসপোর্ট, দুটি চেক বই, ভিজিটিং কার্ড এবং চারটি মোবাইল জব্দ করা হয়।
তাদের গ্রেপ্তারের পর র্যাব বলছে, সেনাবাহিনীর সার্টিফিকেট ও ছবি দেখিয়ে প্রথমে প্রতারক প্রেম করে। এবং বিয়ের সময় ভুয়া মেজর ও ক্যাপ্টেন সাজিয়ে অস্ত্র-গুলি নিয়ে আসে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায় সে মূলত প্রতারক।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) র্যাব-৪ এর অধিনায়ক, অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোজাম্মেল হক বলেন, সম্প্রতি এক নারী ভুক্তভোগী র্যাব-৪ বরাবর অভিযোগ করেন, আরাফাত তুষার নামে এক প্রতারক সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এমনকি ভুক্তভোগীর বাসায় এসে নানা রকম হুমকি প্রদান করছেন।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে গ্রেপ্তার তুষারের ফেসবুকে পরিচয় হয়। সেখানে তুষার নিজেকে মেজর পরিচয় দেয়। এরপর থেকে প্রতারক তুষার বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পোশাক পরা ছবি ভুক্তভোগীর মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে সত্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এছাড়াও বিভিন্ন ভিজিটিং কার্ড এবং ওয়াকিটকি সেটসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সার্টিফিকেট দেখায়। সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত কমান্ডোসহ বিভিন্ন র্যাংক ব্যাজ, মনোগ্রাম দেখিয়ে ভিকটিমকে প্রতারিত করে।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক আরও বলেন, একপর্যায়ে তুষার ভুক্তভোগীকে বলেন বর্তমানে তিনি মিশনে আফ্রিকায় আছেন এবং কয়েকদিন পরই বাংলাদেশে আসবেন। পরে দেশে আসার অভিনয় করে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে তুষার ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করে। মিশনের উদ্দেশ্যে আবার আফ্রিকা চলে যাবে বিধায় ভুক্তভোগীকে বিবাহের চাপ দিতে থাকে তুষার। এক সময় প্রতারক তুষার তার এক বন্ধু হীরাকে ক্যাপ্টেন ও খালাতো ভাই এবং অন্য একজন সহযোগী হৃদয় খানকে ক্যাপ্টেন ও জুনিয়র সহকর্মী বলে ভুয়া পরিচয় দেন।
বিয়ের পর বিদেশে নিয়ে যাবে বলে বিয়ের চাপ দিতে থাকলে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তুষার একজন প্রতারক। তিনি সেনাবাহিনীর সাথে জড়িত না।
মোজাম্মেল বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তুষার ২০০৯ সালে মানিকদীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর ২০০৯ সালেই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান। কিন্তু পড়াশোনা শেষ না করে ২০১৩ সালে তিনি দেশে চলে আসে। তুষার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের দিকে দেশে ফিরে আসেন এবং মেজর, র্যাব কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিভিন্ন পরিচয়ে প্রতারণামূলক কাজে লিপ্ত হন।
গ্রেপ্তাকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
