রাজধানীতে চাঁদাবাজ ও ছিনতাই চক্রের ৫৩ সদস্য গ্রেপ্তার
রাজধানীর রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও ওয়ারী এলাকা হতে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ ৩৩ জন চাঁদাবাজ ও ২০ জন ছিনতাইকারীসহ মোট ৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান ( র্যাব )।
সোমবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক ১৫ টি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত নগদ ১,৪৪,৭৩০ টাকা, মোবাইল ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে লক্ষ্য করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎসব প্রিয় রাজধানীবাসী পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাতভর কেনাকাটা করে থাকেন এবং ব্যবসায়ীরাও উক্ত সময়ে বাজারে তাদের পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করে থাকেন। এই সুযোগে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ী হতে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অবৈধভাবে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করে আসছে। কেউ চাঁদা দিতে রাজী না হলে তারা জীবননাশের হুমকি প্রদর্শন করে। তাদের অত্যাচারে দোকানদারদের স্বাভাবিক ব্যবসা পরিচালনা করা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীবাসী ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে ঈদের কেনাকাটা উপলক্ষে রাজধানীমুখী মানুষের শপিং মল ও বাজারকেন্দ্রিক চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র যাত্রাপথে নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করে চলছে। সাম্প্রতিককালে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি র্যাবের নজরে আসে এবং র্যাব এসব চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব-৩ এর কয়েকটি দল একযোগে রাজধানীর রমনা, খিলগাঁও, হাতিরঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন ও ওয়ারী এলাকায় অভিযানগুলো পরিচালনা করে এসব চাঁদাবাজ ও ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-১) মোঃ আওয়াল (৪৫), ২) মোঃ আতিক (৩৫), ৩। মোঃ আলাউদ্দিন (৪৫), ৪। মোঃ ইসমাইল (৫৪), ৫। মোঃ জুয়েল (৪৩), ৬। মোঃ দুলাল (৪৫), ৭। মোঃ বদির উদ্দিন বাবু (৫০), ৮। মোঃ বাবুল (৫২), ৯। মোঃ বাবুল হাওলাদার (৪৯), ১০। মোঃ মোস্তফা হাওলাদার (৫০), ১১। মোঃ সাহেব আলী (৫৪), ১২। মোঃ তানভির (৪০), ১৩। মোঃ জালাল হোসেন (৩০), ১৪। নিয়ামুল হোসেন (২৯), ১৫। মোঃ ময়নুল হোসেন (৪৫), ১৬। মিন্টু খান (২৫), ১৭। মোঃ মেনু মিয়া (৩৮), ১৮। মোঃ রনি (৩১), ১৯। মোঃ রানা (২৪), ২০। মোঃ শরীফ সরকার (৩৫), ২১। মোঃ মহসীন (২৫), ২২। রনজিৎ দাস (৪৮), ২৩। রাসেল শিকদার (২১), ২৪। মোঃ হারেজ (৪৩), ২৫। মোঃ বাদশা (২৯), ২৬। আল আমীন সর্দার (২০), ২৭। মোঃ শহীদ (২৭), ২৮। মোঃ রাজু (৩৫), ২৯। মোঃ রফিক (২৫), ৩০। মোঃ রোমান (৪২), ৩১। মোঃ আকবর (২০), ৩২। ইমন (১৯), ৩৩। রাব্বি (১৯), ৩৪। মোঃ হৃদয় (১৯), ৩৫। মোঃ হোসেন (১৯), ৩৬। মোঃ আল আমিন (২২) , ৩৭। মোঃ ইসমাইল হোসেন (২২), ৩৮। নাইমুল ইসলাম মিশু (২৫), ৩৯। মোঃ নুরুল হক (২৫), ৪০। মোঃ রতন (২২), ৪১। রাব্বি (১৯), ৪২। মোঃ শফিকুল ইসলাম (২৪), ৪৩। মোঃ সাগর হোসেন শামীম (২০), ৪৪। উজ্জল মিয়া (২০), ৪৫। মোঃ আক্কাছ (৫০), ৪৬। মোঃ ইউছুফ (৩২), ৪৭। মোঃ জাহিদ (৪৪), ৪৮। মুন্সি মুছা আহমেদ (৫২), ৪৯। মোঃ রবিন মিয়া (৩২), ৫০। মোঃ সাগর (২৭), ৫১। মোঃ সুজন (৪৫), ৫২। মোঃ সোহাগ মৃধা (৩২), এবং ৫৩। সোহেল সরকার (৩১)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের অবস্থান থেকে ১,৪৪,৭৩০ টাকা, ৬০ টি মোবাইলফোন ও ৪৫টি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা অপরাধের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সবজি ও ফলের দোকান, ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান, লেগুনা স্ট্যান্ড এবং মালবাহী গাড়ী থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন বলে জানান। তারা আরও জানান যে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান দোকানসমূহের মালিকদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রত্যেক দোকানদারদের নিকট হতে তারা দৈনিক ৫০০-১০০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে থাকেন।
তিনি বলেন, ওয়ারী থানাধীন কাপ্তান বাজারে চাঁদাবাজি শুরু হয় মূলত রাত ১২ টার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত। পোল্ট্রি মুরগী বহনকারী কোন গাড়ি এই বাজারে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গাড়ির ধরন ও মুরগীর পরিমান এর উপর নির্ভর করে চাঁদার পরিমান ঠিক করে দেওয়া হয়। কেউ যদি চাঁদা না দেন তাহলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। প্রতিরাতে এখান থেকে কয়েক লক্ষ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, রমনা থানাধীন শান্তিনগরে মূলত রাস্তার ধারে ভাসমান দোকান থেকে নির্দিষ্ট হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। সকাল ও বিকাল দুই শিফটে চাঁদা আদায় করা হয়। এই কাজে ৪-৫ জনের একটি গ্রুপ জড়িত রয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চাঁদার টাকা না দিলে দোকানদারদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়াসহ মারপিট করা হয়। একইভাবে লেগুনা স্ট্যান্ডে হুমকি দিয়ে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এ সকল চাঁদাবাজদের আইনের আওতায় আনার ফলে নিরীহ দোকানদার ও লেগুনা চালকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে লক্ষ্য করে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীরা রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ওঁৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিত। ইফতারের সময় এবং সেহেরির পর তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করেনা। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহ’র মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি থাকে জানা গেছে।
রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রীরা যেন নিরাপদে ঈদের কেনাকাটা করে স্বস্তির সঙ্গে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন এবং ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা করতে পারেন, এ লক্ষ্য ভবিষ্যতে সকল চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
কেএম/কেএফ/