টিপুর পর নতুন করে আলোচনায় মিল্কি হত্যা
ঢাকার শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকাণ্ডের প্রায় নয় বছর পর আলোচনায় আসছে যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে হত্যার ঘটনা।
আলোচিত এ মামলায় র্যাবের দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রে আসামি ছিলেন টিপু। পরে বাদীর নারাজির পর আদালতের নির্দেশে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে সিআইডি। বিচারিক কার্যক্রমে নাম বাদ পড়ে টিপুর। সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে ১৮ আসামির মধ্যে ১৪ জন জামিনে আর চারজন পলাতক।
যে ভাবে খুন হন মিল্কি
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে ফিল্মি স্টাইলে রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ছোটভাই সেনা কর্মকর্তা রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন।
মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পর যুবলীগের (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এস এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক ও চঞ্চলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই তারেককে উত্তরার ফরচুন হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন র্যাবের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তারেক।
মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল র্যাব কর্মকর্তা কাজেমুর রশিদ মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন। এ অভিযোগপত্রে বাদী নারাজি দিলে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
সিআইডির অভিযোগপত্রে ১৮ আসামির মধ্যে ১৪ জন জামিনে, ৪ জন পলাতক বাদ পড়ে টিপু
২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস এ মামলার তদন্ত শেষে আরও সাতজনকে অভিযুক্ত করে মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রে দাখিল করেন। সেই অভিযোগপত্রে জাহিদুল ইসলাম টিপুর নাম নেই।
অভিযোগপত্রভুক্ত ১৮ আসামি হলেন- সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ।
১৮ আসামির মধ্যে ১৪ জন আছেন জামিনে। চারজন পলাতক। পলাতকদের মধ্যে প্রধান আসামি সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল আমেরিকায় বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া অন্য তিন আসামি মিল্কির গাড়িচালকের স্ত্রী ফাহমিদা ইসলাম লোপা, শরিফ উদ্দীন চৌধুরী পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলীর ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।
মিল্কি হত্যা মামলার বিচার চলছে ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। এ মামলায় নিহত মিল্কির ছোট ভাই ও মামলার বাদী মেজর রাশেদুল হক খান এবং মিল্কির গাড়িচালক মারুফ রেজা সাগরসহ এ পর্যন্ত নয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে লোপাসহ ছয়জন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বর্তমান এ মামলা বিশেষ ট্রাইবুনাল ২-এ বদলি হয়ে গেছে
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এএফএম রিজাউর রহমান রুমেলের দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, এ মামলায় এখন পর্যন্ত নয়জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিশেষ ট্রাইবুনাল ২-এ বদলি হয়ে গেছে। মামলার সম্ভাব্য তারিখ ১৪ এপ্রিল।’
প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও প্রীতি নামে কলেজপড়ুয়া এক তরুণী। এ ঘটনার পরের দিন নিহত টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এর পরে মিল্কি হত্যায় বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে।
কেএম/এসএন